যেমন মঙ্গলবার রাতেই মহারাষ্ট্রের সব বিধায়ককে নিজের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাওয়ার৷ সেখানে ছিলেন কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়কও৷ যাঁরা নিজেদের দলের কার্যকলাপ নিয়েই হতাশায় ভুগছেন৷ সেখানেই হঠাৎ হাজির হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি৷ নিজের বাড়িতে নীতিন গড়কড়িকে অতিথি হিসেবে আপ্যায়ন করার পরের দিনই বুধবার দিল্লিতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন পাওয়ার৷
advertisement
একটি সাংবাদিক বৈঠকে শরদ পাওয়ার দু'টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরে জোর দিয়েছেন৷ প্রথমত শিব সেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের সম্পত্তি যেভাবে ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে তার নিন্দা করেছেন পাওয়ার৷ ইডি এবং সিবিআই-এর অপব্যবহার নিয়েও কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন: সংসদে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র কটাক্ষ অমিত শাহের, আগামিকাল বিক্ষোভে তৃণমূল
এর পাশাপাশি পাওয়ার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সনিয়া গাঁধির জায়গায় তিনি ইউপিএ-এর চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নিতে নারাজ৷ এনসিপি প্রধান জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন৷ সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী একটি ফ্রন্ট গঠনের জন্য তৃণমূল নেত্রী তাঁকে আর্জি জানিয়েছেন বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন পাওয়ার৷
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার এমন কি অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে সামনে রেখেও কোন ফ্রন্ট গড়া যায় কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে৷ বিরোধী শিবিরের অধিকাংশেরই মত, কংগ্রেস সাংগঠনিকভাবে যেরকম দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে তাদের যা ফলাফল, তাতে তাদের পক্ষে কোনও জোটকে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়৷ পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টিকে কংগ্রেস নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবেই ধরে৷ ফলে তাদের সঙ্গে কংগ্রেসও হাত মেলাবে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে৷ যেভাবে আপ হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাতের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের জায়গা নিচ্ছে, তাতে সনিয়া গাঁধির পক্ষে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোও কঠিন৷
আরও পড়ুন: বাজার আগুন, এবার আসরে মমতা! আগামিকালই ডাকলেন জরুরি বৈঠক
এনসিপি-র একটি সূত্র অনুূযায়ী, 'রাহুল গাঁধির কংগ্রেসের হাল ধরা এখন সময়ের অপেক্ষা৷ যদি লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন, তাহলে কতজন বিরোধী নেতা তাঁর সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করতে আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই৷'
আর এক বিরোধী নেতার মতেও কংগ্রেসের ব্যর্থতা এখন প্রতিষ্ঠিত৷ নরেন্দ্র মোদির প্রতিপক্ষ বা বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসের কাউকেই এখন আর ভাবা হয় না৷ ওই নেতার কথায়, '২০০৪-এর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল৷ সনিয়া গাঁধি একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেত্রী হিসেবে উঠে এসেছিলেন৷ একজন মহিলা এবং সিনিয়র নেত্রী হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও ছিল৷ কিন্তু রাহুল বা প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রে একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারে৷'
বিরোধী ফ্রন্টের চেহারা কেমন হতে পারে, আগামী কয়েক সপ্তাহে হয়তো তার আভাস পাওয়া যেতে পারে৷ যে নেতারা বিরোধী জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করে উঠতে পারেননি, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন পাওয়ার৷ সেই তালিকায় রয়েছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল, কেসিআর, জগন মোহন রেড্ডি এমন কি নবীন পট্টনায়েকের নামও৷
তবে সবকিছুই একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে৷ অতীতে বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি৷ বিভিন্ন নেতাদের উচ্চাকাঙ্খা এবং ইগোর কারণেই এবারেও পাওয়ার পক্ষে ঐক্যমত তৈরি করা কঠিন হতে পারে৷ কারণ দিনের শেষে ভোটবাক্সে কী ফল আসে, সেটাই মূল কথা৷ আর নির্বাচনী সাফল্যের নিরিখে এখনও বিজেপি-র বিজয়রথ ছুটছে৷
Pallavi Ghosh