মুম্বই: মহারাষ্ট্রের বহু চর্চিত মামলা মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হল বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর ওরফে সাধ্বী প্রজ্ঞা, কর্নেল পুরোহিত সহ ৭ জনকে৷ বিচারক রায় ঘোষণাকরার পরেই আদালতে আনন্দে প্রায় কেঁদেই ফেলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা৷ বলেন, ‘‘আমি বছরের পর ধরে আমায় হেনস্থা করা হয়েছে৷ সমানে লড়াই করে যেতে হয়েছে৷ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও আমায় দোষী বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে৷ সেই বোঝা আমি নিয়ে বয়ে বেরিয়েছি৷’’’
advertisement
সাধ্বী প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আজ গেরুয়া পতাকার জয় হল, হিন্দুত্বের জয় হল৷ ‘গেরুয়া সন্ত্রাসে’র ন্যারেটিভ মিথ্যে প্রমাণিত হল৷’’ প্রসঙ্গত, মুম্বইয়ের এনআইএ-র বিশেষ আদালত ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডের ৭ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে৷ জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তদন্তকারীরা৷ সন্দেহের বশে কারওকে সাজা দেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেছে আদালত৷
এদিন এনআইএ কোর্টে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে সাধ্বী প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আমি সেই প্রথম থেকেই বলছি, যাঁরা তদন্ত করার কথা বলেছে, তাদের যুক্তির পিছনে কোনও কারণ তো থাকবে? আমায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে৷ আমার সারা জীবন নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷’’
সাধ্বী প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আমি সাধুর জীবন কাটাচ্ছিলাম, আমায় অপরাধী বানিয়ে দিল৷ কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি৷ আমি বেঁচে আছি কারণ আমি সন্ন্যাসী৷ ’’
২০০৮ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ের বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত এবং শতাধিক জন আহত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণে এই মামলাটি সারা ভারতের মানুষেপ মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল৷ ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল এর বিচার প্রক্রিয়া।
পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনানোর সময় বিচারক বলেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্তের সময় বেশ কিছু টেকনিক্যাল ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে বোমা ছিল কি না, তা প্রমাণ করতে পারেনি তদন্তকারীরা। অভিযুক্ত কর্নেল পুরোহিতের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তিনি বোমাটি তৈরি করেছিলেন বা সরবরাহ করেছিলেন। বোমাটি কে রেখেছিল তাও প্রমাণিত হয়নি। ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা কোনও প্রমাণ সংগ্রহ করেননি, যার ফলে প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছিল।
আদালত আরও বলেছে যে বিস্ফোরণের পর পঞ্চনামা সঠিকভাবে করা হয়নি, ঘটনাস্থল থেকে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়নি এবং বাইকের চেসিস নম্বর কখনও উদ্ধার করা হয়নি। এছাড়াও, বাইকটি সাধ্বী প্রজ্ঞার নামে ছিল কিনা তা প্রমাণ করা যায়নি। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে সাত অভিযুক্তই নির্দোষ। কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। আদালত আরও মন্তব্য করেছে যে সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই।