সম্প্রতি, নিজস্ব গবেষণা, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডায়েরি এবং অন্যান্য নথিপত্র ঘেঁটে এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর বাবার ব্যক্তিগত কথার স্মৃতিচারণা অবলম্বন করে একটি বই লিখেছেন প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়৷ নাম ‘Pranab, My Father: A Daughter Remembers’৷ প্রণবের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনার উল্লেখ রয়েছে সেই বইয়ে৷
advertisement
ইন্দিরা গান্ধির ঘনিষ্ঠ, পরে রাজীব, সনিয়া থেকে রাহুল৷ গান্ধি পরিবারের একাধিক প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ তার পরেও অবশ্য, রাহুল গান্ধির সম্পর্কে তাঁর মতামত খুব এক সন্তোষজনক ছিল না৷ অন্তত রাজনীতির কারবারিরা তেমনটাই বলে থাকেন৷ শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের বইয়ে রাহুল গান্ধি সম্পর্কে প্রণবের একাধিক মন্তব্যেও উঠে এসেছে খানিক তেমনই অভিব্যক্তি৷
শর্মিষ্ঠার বই অনুযায়ী, রাহুল গান্ধি সম্পর্কে প্রণব বলেছিলেন, ‘‘ওঁর মধ্যে গান্ধি-নেহরুর মতো অহংকার রয়েছে, কিন্তু, ওঁদের মতো রাজনৈতিক মেধা নেই৷’’ রাহুলকে বরাবরই অপরিণত রাজনীতিক মনে করতেন প্রণব৷
২০১৩ সালে প্রকাশ্যে ওই ভাবে নিজেরই সরকারের অর্ডিন্যান্স ছেঁড়ার বিষয়টি একেবারেই অপরিণত রাজনীতিকের কাজ বলে মনে করেছিলেন প্রণব৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘ও নিজেকে কী ভাবে? মন্ত্রিসভার সদস্যও ও নয়৷ মন্ত্রিসভার একটা সিদ্ধান্তকে এভাবে জনসমক্ষে ছিঁড়ে ফেলার ক্ষমতা কে দিয়েছে ওঁকে? ওঁ জানে না এর ফল কী হতে চলেছে৷ সকলের সামনে নিজেরই প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার অধিকার ওঁকে কে দিয়েছিল?’’
শর্মিষ্ঠার কথায়, প্রণব মুখোপাধ্যায় মনে করতেন, ২০১৪ সালে কংগ্রেসর ইউপিএ সরকারের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল রাহুল গান্ধির ওই দিনের আচরণ৷ তাঁর মতে, মানুষ কী ভাবে এমন সরকারকে ভোট দিত, যে সরকারে প্রধানমন্ত্রীরই কোনও সম্মান নেই!
এছাড়া, রাহুল সংক্রান্ত আরেকটি ঘটনার কথাও বইতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সেখানেও কংগ্রেস সাংসদের প্রতি ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে প্রণবকে৷
সে সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি৷ রাহুল গান্ধির দফতর থেকে তাঁর কাছে সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল৷ রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে সন্ধ্যার সময় উল্লেখ করে সেই আবেদনের উত্তর দেওয়া হয়৷ কিন্তু, কাজে দেখা যায়, সন্ধেবেলা আসার বদলে সকাল সকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে হাজির হয়েছেন রাহুল৷
এদিকে, সকালে নিজের প্রাতঃভ্রমণ এবং পুজোপাঠে বাধা পড়া পছন্দ ছিল না প্রণবের৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও তিনি সেবার রাহুলের সঙ্গে সকাল বেলাতেই সাক্ষাৎ করেছিলেন৷ পরে কন্যা শর্মিষ্ঠাকে নাকি তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাহুলের দফতর তো AM, PM-ই বোঝে না, প্রধানমন্ত্রীর দফতর চালানোর স্বপ্ন দেখে কী করে?’’
কেন্দ্রীয় অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির হিসাবে মনোনীত হন। ২০১২ থেকে ১৭ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি৷ ২০২০ সালের ৩১ অগাস্ট, ৮৪ বছর বয়সে মারা যান প্রণব মুখোপাধ্যায়।