সোমবার রাতে শিবসেনা সরকার গঠনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় পর শরদ পাওয়ারের এনসিপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল ৷ এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা দেখানোর জন্য এনসিপির কাছে আজ রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সময় ছিল ৷ কিন্তু সময়সীমা শেষের আগেই মহারাষ্ট্রে জারি রাষ্ট্রপতি শাসন ৷ জাতীয় রাজনীতির ময়দানে এখন ঘুরছে অনেক প্রশ্ন ৷ এবার কী? এখনও কী সরকার গড়ার সুযোগ আছে এনসিপি, কংগ্রেস বা শিবসেনার কাছে?
advertisement
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পর কী কী পরিবর্তন মহারাষ্ট্রে?
ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫৬ অনুসারে, এখন রাজ্য সরকারের সমস্ত কার্যভারই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে ৷ একইসঙ্গে রাজ্যপাল সহ অন্য কার্যকারী আধিকারিকরাও এই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ফলে বিশেষ ক্ষমতা পান ৷ কোনওভাবে রাজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে রাজ্যপালের থেকে পাওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সংসদের দুই কক্ষের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশে চুড়ান্ত অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি ৷ ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দুই কক্ষের সম্মতিতে সর্বোচ্চ ৬ মাস রাষ্ট্রপতি শাসন চলতে পারে ৷ ছয় মাস অতিক্রান্ত হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব এনে সময়সীমা আরও বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে ৷ এভাবে প্রতি ৬ মাস অন্তর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কোনও রাজ্যে চলতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন ৷
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরেও কি দলগুলি রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে?
২৫ অক্টোবর মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরও কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বা জোটের ভিত্তিতে সরকার গড়ার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ৷ ২৮৮ আসনে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ম্যাজিক ফিগার ১৪৫ ৷ বিজেপির ঝুলিতে রয়েছে ১০৫টি আসন৷ অন্যদিকে শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ এবং কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ৪৪টি আসন ৷ এই পরিসংখ্যান ও নিজেদের মধ্যে সমীকরণ বদলের ভিত্তিতে সরকার গড়ার জন্য ন্যূনতম ১৪৫টি বিধায়ককে একত্রিত করে এনসিপি, কংগ্রেস, শিবসেনা কিংবা বিজেপি সরকার গড়ার জন্য ইচ্ছে প্রকাশ করতেই পারে ৷ সেক্ষেত্রে আস্থা ভোটের মাধ্যমে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিলেই মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের কার্যকাল শেষ হয়ে যাবে ৷ নয়তো, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে এদিন থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন ঘোষণা করতেই হবে ৷ ফের জনগণের ভোটেই নতুন করে নির্বাচিত হবে রাজ্য সরকার ৷
রাষ্ট্রপতি শাসন খারিজের অধিকার রয়েছে কি সুপ্রিম কোর্টের?
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সু্প্রিম কোর্টে শিবসেনা ৷ শিবসেনার দাবি, বিজেপির পক্ষপাতিত্ব করছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি ৷ বিজেপিকে যেখানে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা পেশের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল সেখানে সেনা পায় মাত্র ২৪ ঘণ্টা ৷ ইচ্ছাকৃতভাবে শিবসেনাকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিতে চাওয়ার জন্যই এমন ব্যবস্থা বলে অভিযোগ ৷ এর থেকেই রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে একটি প্রশ্ন ৷ কোনওভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন কি খারিজ করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট? অতীতে কর্ণাটকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ভারতীয় সংবিধানে শীর্ষ আদালতকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী, কেন্দ্র কোনও রাজ্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত নিলে, সেই সংক্রান্ত দলিল,নথি খতিয়ে দেখার অধিকার রয়েছে কোর্টের ৷ সংশ্লিষ্ট রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পিছনে যুক্তি ও প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে কেন্দ্রকেই ৷ একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের ঘোষণা যদি অসাংবিধানিক হয়, তা হলে বাতিল হওয়া রাজ্য সরকারকে পুনর্বহাল করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে ৷ এছাড়া রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্তে লোকসভা ও রাজ্যসভার সিলমোহর পড়ার আগেও সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করতে পারে৷ যদিও মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা হয়নি ৷
এই প্রথম নয়, এই নিয়ে তৃতীয়বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি মহারাষ্ট্রে ৷ ১৯৮০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ জুন ১৯৮০ অবধি ১১২ দিনের জন্য মহারাষ্ট্রে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন ৷ কিন্তু সেবারও মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল শরদ পাওয়ারের হাতে ৷ এরপর ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে ৩১ অক্টোবর অবধি চলে রাষ্ট্রপতি শাসন ৷ ২০১৪ সালে শরিক দলের সঙ্গে কংগ্রেসের মনোমালিন্যে ভেঙে যায় সরকার ৷