এখানেই শেষ নয়, ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোদি উন্নয়নের উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। আর বিরোধী দল সেই উত্তরাধিকার লুন্ঠন করার চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। Network18 Group-এর এডিটর-ইন-চিফ রাহুল জোশীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান যে, কংগ্রেস ইস্তেহারের ‘খারাপ’ দিকগুলি নিরপেক্ষ ভাবে প্রকাশ্যে আনার জন্য তিনি প্রায় ১০ দিন অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কিছু ‘সত্য’ প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হয়েছেন অবশেষে।”
advertisement
আরও পড়ুন: ‘কেজরিওয়াল পাবেন বড় স্বস্তি…?’ সোমবার সুপ্রিম শুনানি! আশায় বুক বাঁধছেন AAP সমর্থকেরা
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “যেহেতু কংগ্রেসের ইস্তেহার নিয়ে কথা হচ্ছে, আমাকে কেউ বলতে পারেন যে, নির্বাচনের সময় কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার কি নিছকই শোপিস? প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার পড়া মূলত সংবাদমাধ্যমেরই দায়িত্ব। আর এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যম কবে মন্তব্য করছে, তার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি। আমি কিন্তু প্রথম দিনেই ওই ইস্তেহার নিয়ে মন্তব্য করেছিলাম। ইস্তেহারটি দেখার পরেই আমার কোথাও যেন মনে হয়েছে, এতে মুসলিম লিগের ছাপ স্পষ্ট। আমি ভেবেছিলাম যে, সংবাদমাধ্যম এতে তাজ্জব হয়ে যাবে। অথচ ইস্তেহারে কংগ্রেস যা উপস্থাপন করেছে, সেটাই তারা কেবল বলেছে।”
তিনি আরও বলে চলেন, “এরপর আমি ভাবলাম, এটা হল এই বাস্তুতন্ত্রের একটা বড়সড় কেলেঙ্কারি। আর আমাকেই সত্যটা সামনে আনতে হবে। তবুও ওই ইস্তেহারের খারাপ দিকগুলো কেউ তো সামনে আনুন, এটার জন্যই ১০ দিন অপেক্ষা করেছি। কারণ এটা নিরপেক্ষ ভাবে প্রকাশ্যে এলে ভাল হত। অবশেষে আমাকেই সেই সত্য সামনে আনতে হল।”
মুসলিমদের মধ্যে কংগ্রেস সম্পদ ‘পুনঃবন্টন’ করতে চাইছে, এই সংক্রান্ত বিষয়ে মোদির দাবি সত্যিই সত্যিই উদ্বেগজনক কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযান সূক্ষ্ম ভাবে দেখার জন্য আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য, “আমার মনে হয় যে, আপনার টিম আমার গোটা প্রচারাভিযান ভাল করে দেখেনি… আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন যে, আমার গোটা নির্বাচন প্রচারাভিযানের দু’টি লক্ষ্য রয়েছে। এক, আমরা সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করেছি। এই সরকারের সবথেকে বড় পার্থক্য (আগেরগুলির তুলনায়) হল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়াটাই আমাদের বিশেষত্ব। দেখুন, খারাপ করার জন্য তো আর সরকার গঠিত হয় না, তারা ভালই করতে চায়। কিছু মানুষ জানেন কীভাবে অন্যদের ভাল করতে হয়, আবার কিছু মানুষ ভাল কিছু ঘটার আশায় থাকেন। আর আমি এমন একজন মানুষ, যিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করায় বিশ্বাসী।”
তাঁর সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আমি তো নির্বাচনে বলেই যাচ্ছি যে, আমরা দরিদ্রদের জন্য প্রায় ৪ কোটি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। আমি অনেককেই বলে রেখেছি যে, আপনারা যখন ভোট প্রচারে যাচ্ছেন, তখন ওইসব এলাকায় কাদের ঘর এখনও তৈরি হয়নি, সেই বিষয়ে একটা তালিকা দিয়ে আমায় দয়া করে সাহায্য করুন। আমার তৃতীয় মেয়াদ চালু হলে এই কাজটাকেই আমি এগিয়ে নিয়ে যাব।”
আরও পড়ুন: টার্গেট বড় মার্জিন! লোকসভার প্রচারে আজ হাওড়ায় জোড়া কর্মসূচী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড করার বিষয়েও আত্মবিশ্বাসী নরেন্দ্র মোদি। এমনকী নিজের ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমি আরও ৩ কোটি বাড়ি তৈরি করতে চাই। এখন তো আয়ুষ্মান ভারত যোজনা হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ হেলথ ইনস্যুরেন্স এবং হেলথ অ্যাশিউরেন্স স্কিম। এক্ষেত্রে প্রায় ৫৫ কোটি মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা রয়েছে। সেই সঙ্গে মোদি সরকার আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, সেটারও নিশ্চয়তা প্রদান করছে এটি। এবার আমরা ইস্তেহারে জানিয়েছি যে, শ্রেণী, সামাজিক অবস্থান, পটভূমি নির্বিশেষে সত্তরোর্ধ্ব যে কোনও মানুষ – মহিলা এবং পুরুষ উভয়ই ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। এর পাশাপাশি ইস্তেহারে আমরা এ-ও জানিয়েছি যে, আশা কর্মীদেরও আমরা এই সুবিধা দেব। এমনকী রূপান্তরকামীদেরও আমরা সুযোগ-সুবিধা দেব, সে তাঁদের বয়স যা-ই হোক না কেন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও যোগ করেন, “আমাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা করুণ ছিল। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অংশ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য টাকা দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁদের অ্যাকাউন্টই খোলেইনি। এরপর মোদি আসেন এবং ৫২ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দেন। আমি এর বড় সুযোগ নিয়েছি। আসলে আমি জন ধন, মোবাইল এবং আধারের সুযোগটা নিয়ে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের বিষয়টাকে উৎসাহিত করেছি। ৩৬ লক্ষ কোটি টাকা কিন্তু একটা বড়সড় পরিমাণ অর্থ, যা ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে মানুষের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে। এই বিশাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে আমাদের দেশে (অ্যাকাউন্ট খোলার কারণে)। এক বছরে বিশ্বে যত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান তার তুলনায় অনেকটাই বেশি।”
২০১৪ সালের আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর সরকারের পারফরম্যান্সের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন ২০১৪ সালের আগের পরিস্থিতি? ‘ফ্র্যাজাইল ৫’ সব সময় শিরোনামে থাকত। অথচ আজকের দিনে আমরা একটা দারুণ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছি। আইএমএফ-এ বিশ্বের ১৫০টি দেশের একটি গ্রুপ রয়েছে, যার মধ্যে চিন এবং ভারতও অন্তর্ভুক্ত। আর একে আমরা উন্নয়নশীল দেশ অথবা উদীয়মান অর্থনীতির দেশও বলতে পারি।”
উত্তরাধিকার কর নিয়ে কংগ্রেসের বিদেশি শাখার সভাপতি স্যাম পিত্রোদার মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “তাদের একজন মহান ব্যক্তি আমেরিকায় এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি উত্তরাধিকার কর, সম্পত্তির উপর প্রায় ৫৫ শতাংশ করের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। এখন আমি উন্নয়ন এবং উত্তরাধিকারের কথা বলছি। আর সেখানে তাঁরা সেই উত্তরাধিকার লুণ্ঠনের কথা বলছেন। ইস্তেহারে তাঁরা যা যা উল্লেখ করেছেন, আজ পর্যন্ত সেটাই তাঁদের কাজের ইতিহাস। তাঁরা দেশকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা দেশবাসীকে জানানো আমার দায়িত্ব। এবার আপনারাই ঠিক করুন, আপনারা তাঁদের সঙ্গে যেতে চান না কি চান না। কিন্তু এটা আমার দায়িত্ব যে, তথ্য ও গুরুত্বের ভিত্তিতে আমি আপনাদের সত্য বলব।”