তাঁর দাবি, রাজার পাশাপাশি অন্য কোনও মহিলাকে খুন করে তাঁর দেহ এমন ভাবে পুড়িয়ে দেওয়ার ছক ছিল, যাতে তা শনাক্ত করা না যায়। ফলে তা অনায়াসে সোনমের বলে চালিয়ে দেওয়া হত। এরপর কয়েকদিন গা-ঢাকা দিয়ে থেকে ঘটনার আঁচ থিতিয়ে গেলে আরামের জীবন কাটানোর পরিকল্পনা ছিল সোনমের।
আপাতত সোনম, রাজ কুশওয়াহা এবং বাকি তিন অভিযুক্ত এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। বুধবার অভিযুক্তদের ৮ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সকলকে জেরা করা হচ্ছে। কীভাবে সোনম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছিল, সেই কথাও জেরার প্রথম দিনে কবুল করেছে প্রত্যেক অভিযুক্তই।
advertisement
ইস্ট খাসি হিলস এসপি বিবেক সিয়েম সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন যে, তিন অভিযুক্ত আসলে কোনও সুপারি কিলার নয়। তারা আদতে মূল চক্রী রাজের বন্ধু। এদের মধ্যে একজন আবার রাজের তুতো-ভাইও বটে! ফলে এটা কোনও সুপারি খুনের ঘটনা নয়। তবে বন্ধুদের সাহায্য নিয়েই রাজাকে খুনের ছক কষেছিল রাজ। আর এই কাজের জন্য খরচ হিসেবে ৫০০০০ টাকা অভিযুক্তদের দিয়েছিল সে।
এই খুনের ছক ইনদওরে সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই কষা হয়ে গিয়েছিল। রাজার থেকে সোনমকে আলাদা করার জন্য একাধিক পথ ভেবে রেখেছিল তারা। তবে কোনও পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে যে, ঘটনার দিন বিশাল নামে এক অভিযুক্তের কাছে একটি বোরখা দিয়েছিল রাজ। ঘটনাস্থলে রাজাকে হত্যার পর সেই বোরখাটি সোনমের হাতে তুলে দিয়েছিল বিশাল। ওই বোরখা পরেই পুলিশ বাজার পৌঁছেছিল সোনম। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে গুয়াহাটি পৌঁছেছিল সে। এরপর গুয়াহাটি থেকে বাসে চেপে যায় শিলিগুড়ি। সেখান থেকে বাসে চেপে সোনম পটনা পৌঁছয়, সেখান থেকে আরা হয়ে লখনউগামী ট্রেনে চেপে বসে। লখনউ থেকে ইনদওরের বাস ধরে।
এদিকে রাজা-সোনমের খোঁজে তল্লাশির সময় মেঘালয়ের সংবাদমাধ্যমের কাছে এক ট্যুরিস্ট গাইড দাবি করেছিলেন যে, তিন জন ব্যক্তির সঙ্গে সোনম আর রাজাকে দেখেছেন তিনি। সেই তথ্যই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। পুলিশ অফিসার বলেন যে, রাজ সোনমকে ইনদওর ছেড়ে পালিয়ে আবার শিলিগুড়ি চলে যেতে বলেছিল। এরপর অপহরণ করা হয়েছে বলে নাটক সাজানোর কথাও বলেছিল। সোনম যখন ৮ জুন ইনদওর ছাড়ে, তখন সাধারণ পোশাকে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ পাড়ি দেয় মেঘালয় পুলিশের দুটি দল।
পুলিশ অফিসারের কথায়, উত্তরপ্রদেশে যখন প্রথম অভিযুক্ত আকাশকে পাকড়াও করা হয়, তখন ভয় পেয়ে যায় রাজ। সোনমকে বলে, নিজের পরিবারকে কল করে কোথায় আছে, তা জানাতে। আর এটাও বলতে বলে যে, অপহরণকারীদের হাত থেকে কোনওক্রমে বেঁচে পালিয়েছে সে। এরপরেই গাজিপুরের গোটা ঘটনা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে। আসলে অভিযুক্তরা ভেবেছিল যে, রাজার দেহ অনেক দূরে উদ্ধার হয়েছে, ফলে পুলিশি তদন্ত ১-২ মাস চলবে। তাই সোনম নিজেকে আক্রান্ত বলে দাবি করতে পারবে।
সব শেষে ওই পুলিশ অফিসার বলেন যে, “আমরা অভিযুক্তদের জেরা করছি। একবার গোটা চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে গেলেই সবটা সামনে আসবে। কারণ অভিযুক্তদের কথায় এখনও অসঙ্গতি রয়েছে। তারা ভিন্ন ভিন্ন গল্প বলছে। আমরা সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করব এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধের দৃশ্যের পুনর্নির্মাণও করব।” আর তিনি আশ্বাস দিয়ে এ-ও বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী যে, বাধ্যতামূলক ৯০ দিনের মধ্যেই এই মামলার চার্জশিট পেশ করতে পারবে পুলিশ।”
২৩ মে দুপুর ২টো থেকে ২টো ১৮ মিনিটের মধ্যে সোনমের সামনেই খুন করা হয় রাজাকে এবং তাঁর দেহ একটি খাদে ফেলে দেওয়া হয়।রাজার দেহ উদ্ধার করা হলেও খোঁজ মিলছিল না সোনমের। গত ৮ জুন মধ্যরাতে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সোনম। অন্যদিকে রাজ কুশওয়াহা-সহ বাকি চার অভিযুক্তকে মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।