পার্লামেন্টে হলুদ ও লাল ধোঁয়া উড়িয়ে প্রতিবাদের ঘটনায় ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা এবং তিনজন পুরুষ৷ সংসদের ভিতর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন সাগর শর্মা এবং ৩৫ বছরের ডি মনোরঞ্জন৷ সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছেন বছর ৪২-এর নীলম সিং এবং ২৫ বছরের তরুণ অমল শিণ্ডে৷
এর মধ্যে নীলম হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা। অমল মহারাষ্ট্রের লাতুরের। সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি কর্ণাটকের৷ তবে দু’জনে আলাদা শহরের থাকেন। পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পার্লামেন্টে যে চার অভিযুক্ত ধোঁয়া হামলা চালিয়েছিল তারা একে অপরকে আগে থেকেই চিনত। কিন্তু, তবে সামনাসামনি নয়, তাঁদের আলাপ হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ এমনকি, শেষ পাওয়া খবরে এ-ও জানা যাচ্ছে, এই ঘটনার পিছনে ৪ জন নয়, হাত ছিল মোট ৬ জনের৷ এই অন্য ২ জনের খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷ তাঁদের দু’জনের নাম বিক্রম এবং ললিত৷
advertisement
জানা গিয়েছে, ‘অ্যাকশনের’ আগে এই ৬ জনের সবাই গুরুগ্রামে গভীর রাতে বৈঠক করেছিলেন। বাড়িটি ছিল বিক্রমের। সেখানে বসেই সংসদে ঢোকার ষড়যন্ত্রের ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরি করে তাঁরা। তিনমাস ধরে চলছিল এঁদের এই পরিকল্পনা৷ পরস্পরকে ৪ বছর ধরে চিনতেন এই ৬ জন৷ এঁরা সকলেই ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাবের’ সদস্য৷ সেই গ্রুপ থেকেই একাট্টা হয়ে সংসদে এই কাজ করার পরিকল্পনা৷
ধৃত নীলম সিং এবং অমল শিন্ডের তাছে থেকেও কোনও মোবাইল ফোন পায়নি পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ধৃতদের মোবাইল ফোন উদ্ধার করলে সেখান থেকে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। বর্তমানে ধৃত চারজনেরই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
যে কেউ কিন্তু সংসদ ভবনে ঢুকতে পারেন না৷ সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকতে গেলে কোনও সাংসদ বা মন্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ পাস সংগ্রহ করতে হয়৷ জানা গিয়েছে, ধৃতেরা এই পাস সংগ্রহ করেছিলেন মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিংহর কাছ থেকে৷ সূত্রের খবর, সেই পাস পাওয়ার জন্য তিন মাস ধরে সাংসদের অফিসে হত্যে দিতেন অভিযুক্তেরা৷ ‘স্মোক অ্যাটাকে’র অন্যতম অভিযুক্ত সাগর শর্মা মাইসুরুর বাসিন্দা৷ তিনি নাকি প্রায়ই যেতেন প্রতাপের কার্যালয়ে৷
পরে ‘বন্ধু’ ডি মনোরঞ্জনের সঙ্গেও সাংসদ প্রতাপের পরিচয় করিয়ে দেন সাগর৷ তিন মাস পরে অবশেষে পার্লামেন্টে ঢোকার তিনটি পাস৷ তবে জানা গিয়েছে, বাচ্চা নিয়ে এক মহিলাও নাকি পাসের জন্য দরবার করতে এসেছিলেন প্রতাপ সিংহের কাছে, যোগাযোগ করিয়েছিলেন সেই সাগরই৷ তবে, সেই মহিলাকে পাস দেওয়া হয়নি৷ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি সেই মহিলার পরিচয়৷
আরও পড়ুন: পার্লামেন্ট ‘স্মোক অ্যাটাকে’ অভিযুক্ত এই মহিলাকে চেনেন? নাম কী, কাজই বা কী করেন! জানুন…
বুধবার, ঘড়িতে তখন ১টা বেজে ২ মিনিট৷ সংসদে জিরো আওয়ার চলছে৷ বক্তৃতা করছেন খগেন মূর্মূ৷ হঠাৎই দর্শকাসন থেকে সাংসদদের বেঞ্চে লাফিয়ে পড়লেন এক যুবক৷ সাংসদদের একের পর এক বেঞ্চ টপকে অধ্যক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ সঙ্গে ওঠে, ‘তানাশাহী নেহি চলেগি (স্বৈরাচার চলবে না)’, ‘ভারত মাতা কী জয়’, ‘জয় ভিম, জয় ভারত’ স্লোগান৷
এর মধ্যেই অবশ্য তড়িঘড়ি লোকসভার অধিবেশন স্থগিত করে দেন অধ্যক্ষ৷ ততক্ষণে, ভিজিটার্স গ্যালারি থেকে উড়তে শুরু করেছে হলুদ ধোঁয়া৷ প্রথমে সাংসদদে ধাক্কা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও পরে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে যান দুই তরুণ৷ নাম, সাগর শর্মা এবং ডি মনোরঞ্জন (৩৫)৷
সাগর শর্মাই সাংসদদের বেঞ্চে লাফ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ হলুদ ধোঁয়া ওড়াচ্ছিলেন ডি মনোরঞ্জন৷ মনোরঞ্জন কর্ণাটকের মাইসুরুর বাসিন্দা৷ সেখানকার একটি কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র সে৷ যে মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিংহর কাছ থেকে সংসদে ঢোকার পাস পেয়েছিলেন তাঁরা৷
এদিকে, সংসদের অন্দরে যখন এই ঘটনা ঘটছে, ঠিক সেই সময়ই বাইরে সংসদ ভবন চত্বরের পরিবহণ দফতরের বাইরে হলুদ ধোঁয়া উড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায় এক মহিলা ও এক তরুণকে৷ তাঁদেরও সেই সময় গ্রেফতার করে পুলিশ৷
এখন প্রশ্ন, হঠাৎ কেন কাণ্ড ঘটালেন এই চারজন৷ এর পিছনে কি কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ছিল? এঁরা কি কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত? কেন ‘সংসদ হামলা’র দিনটাকেই বেছে নিয়েছিলেন এঁরা?
সূত্রের খবর, এদিন ধৃত চারজনের মধ্যে একজন, হরিয়াণার নীলম সিং গ্রেফতারির পরে দাবি করেছেন, তাঁরা মূলত ‘বেকারত্বের’ বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলেন বুধবার৷ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও, এতটা বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁরা এখনও বেকার, কেন দেশে কর্মহীন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা এত বেড়ে যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব চাইতেই এদিন তাঁরা এই পথ বেছে নিয়েছিলেন৷ তাঁদের দাবি, এমন কিছু না ঘটানো ছাড়া, নিজের কথা কেন্দ্রীয় সরকারের কানে তোলার আর কোনও রাস্তা তাঁদের কাছে খোলা ছিল না৷