‘দ্য ওয়েডিং ফিল্মার’ নামের ওয়েডিং ফটোগ্রাফি কোম্পানি, যার ইনস্টাগ্রামে ২,৫৮,০০০ এরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে, তারা তাদের মালিক বিশাল পঞ্জাবির হিন্দু বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি ছবি শেয়ার করেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে বিশাল পঞ্জাবি নববধূ নিকি কৃষ্ণের সিঁথিতে সিঁদুর দিচ্ছেন। ক্যাপশনে লেখা আছে, “সিঁদুর ভালোবাসার জন্য। যুদ্ধের জন্য নয়।”
advertisement
ছবিটি ঐতিহ্য এবং ভালবাসার উদযাপন হলেও ক্যাপশনটি অনেক ব্যবহারকারীর মনে ক্ষোভ জাগিয়েছে, বিশেষ করে অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে , যা ২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখের এপ্রিল পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সামরিক পদক্ষেপ ছিল।
অনেক ব্যবহারকারী পোস্টটির নিন্দা করেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হানায় প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতি অসংবেদনশীল এবং অসম্মানজনক বলে অভিযোগ করেছেন।
একজন ব্যবহারকারী হতাশা প্রকাশ করে লেখেন যে, বিশাল সীমান্তের ওপারের লোকদের পাশে রয়েছেন! “আপনার কাছ থেকে আমি আরও ভাল কিছু আশা করেছিলাম!!! যখন ২৬ জন নারী তাঁদের পুরুষদের হারিয়েছিলেন, তখন এই লাইনগুলো কোথায় ছিল! যদি আপনি সীমান্তের ওপারের কারও প্রতি এত সহানুভূতিশীল হন, তাহলে সেখানেই গিয়ে থাকতে পারেন… কারণ আপনি ভারতীয় নন!”
আরেকজন ব্যবহারকারী এই প্রসঙ্গে সিঁদুরের আবেগগত দিক তুলে ধরেছেন : “আপনার তৈরি সুন্দর বাস্তব গল্পগুলো আমার খুব ভাল লাগে.. তবে, আপনার এই পোস্টটি আমাকে এই সুন্দর ছবিটি পছন্দ করার চেয়ে মন্তব্য করতে বাধ্য করেছে! আসুন স্যার.. সেই স্ত্রীদের কথা ভাবুন, যাঁরা চোখের সামনে তাঁদের সিঁদুর হারিয়েছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু পাকিস্তানি আপনার পোস্টের প্রশংসা করছে.. এবং আমি অবাক হচ্ছি না।”
কিছু মন্তব্য পঞ্জাবিকে বাস্তবতার সংস্পর্শে না থাকার অভিযোগ এনেছে। “আপনি সম্ভবত বোকার স্বর্গে বাস করছেন যেখানে আদর্শবাদী বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলা সহজ। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি যে ভালবাসার কথা বলছেন তা অনেকেই নির্মমভাবে হারিয়ে ফেলেছেন।”
বিশেষ করে ক্ষুব্ধ একটি মন্তব্য তাঁকে দেশপ্রেমিক নয় বলেও অভিযুক্ত করেছে- “এটা আপনার জাতীয়তাবাদবিরোধী আচরণ। তথ্য মন্ত্রণালয় এবং পুলিশকে এটি জানিয়েছি।”
বিরুদ্ধ এবং বিরূপ সমালোচনাই বেশি হলেও, এমন ইউজারও আছেন যাঁরা এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে বিশালের শান্তি প্রচারের সাহসের প্রশংসা করেছেন। একজন সমর্থক লিখেছেন, “শান্তি প্রচারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত যে এই পোস্ট করার জন্য আপনি প্রচুর ঘৃণা পাবেন, তবে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।”
আরেকজন যোগ করেছেন, “এটা বলা খুব সাহসের। আপনি যে প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবেন, তা আমি কল্পনা করতে পারছি। বোধশক্তি এবং শান্তি বিরাজ করুক।”
অন্যরা সংক্ষিপ্ত কিন্তু সমর্থনমূলক বার্তা রেখে গিয়েছেন। যেমন, “কথা বলার জন্য ধন্যবাদ!” আরেকজন যোগ করেছেন, “কিছু সুস্থ মানুষ এখনও আছেন দেখে খুশি হলাম! ঈশ্বর মানবতাকে রক্ষা করুন, প্রতিটি শিশু, প্রতিটি আত্মা নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকুক।”
তবে, অপারেশন সিঁদুরের নামকরণ কিন্তু হিংসার বার্তা দেয় না। এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা আবেগগতভাবে এবং প্রতীকী দিক থেকে বীরত্বপূর্ণ একটি বার্তা বহন করে।
সামরিক এক অভিযানের নামের সঙ্গে কেন সিঁদুর শব্দটি যোগ হল, তা বুঝে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সিঁদুর ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু মহিলাদের বৈবাহিক অবস্থাকে নির্দেশ করে এবং সে দিন পহেলগাঁওতে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে সন্ত্রাসবাদীরা ধর্মের ভিত্তিতে পুরুষদের, কিছু নববিবাহিতকে বেছে বেছে হত্যা করে।
শুধুই অকালবৈধব্যের প্রতিকার নয়, সিঁদুর বীরত্বেরও প্রতীক, কেন না এক সময়ে দেশের বীর যোদ্ধারা যুদ্ধে যাওয়ার আগে কপালে সিঁদুরের তিলক ধারণ করতেন।