ভারতের মতো দেশে যেখানে রেল পরিষেবা সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও বিস্তৃত, সেখানে পাচারকারীরা প্রায়ই মাদক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে রেলপথকে ব্যবহার করে থাকে। তারা অসংরক্ষিত কামরা, স্লিপার কোচ, পার্সেল ভ্যান এমনকি নিরীহ যাত্রীদেরও পাচারে ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য তৈরি হয়েছে একটি জটিল চ্যালেঞ্জ।
তবে এই হুমকির মোকাবিলায় ভারতীয় রেলওয়ের রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) এখন আরও সতর্ক ও সক্রিয়।
advertisement
বর্ষায় সাপ-খোপ ঢুকে পড়ছে ঘরে? বাড়ির চারপাশে লাগান এই ৫ গাছ, প্রাকৃতিক ভাবে মিলবে ‘রক্ষা কবচ’!
রেলে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য আরপিএফ-এর, ‘অপারেশন নারকোস’-এ কোটি টাকার নিষিদ্ধ দ্রব্য জব্দ
🎯 ‘অপারেশন নারকোস’-এ নজিরবিহীন সাফল্য
রেল মন্ত্রকের আওতাধীন ‘অপারেশন নারকোস’ অভিযানের মাধ্যমে ২০২৪ সালে আরপিএফ ২২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে এবং ১,৩৮৮ জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। এই সংক্রান্ত নজরদারি, তল্লাশি এবং গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযানের গতি অব্যাহত রয়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই আরপিএফ ৬৮ কোটির বেশি মূল্যের মাদক জব্দ করেছে, যা গোয়েন্দা তথ্য এবং সমন্বিত প্রয়োগের সাফল্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
🔍 মাল্টি-লেভেল নজরদারি ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
আরপিএফ এখন একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে:
- ট্রেন, প্ল্যাটফর্ম ও পার্সেল অফিসে নিয়মিত ও আকস্মিক তল্লাশি
- উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি দল, স্নিফার ডগ স্কোয়াড ও গোপনচর মোতায়েন
- সিসিটিভি নজরদারি, হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার, বডি ওয়ার্ন ক্যামেরা-র ব্যবহার
আরপিএফ একাধিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ অভিযানও চালাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (NCB)
- গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (GRP)
- রাজ্য পুলিশ বাহিনী
- অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা
🧠 জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ
শুধু অভিযান নয়, রেল কর্মচারী ও যাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচিও চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানানো হচ্ছে এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা জানিয়েছেন—
“আরপিএফ-এর নিরন্তর প্রচেষ্টায় রেলপথে মাদক পাচার অনেকটাই রোধ করা গেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে সুরক্ষিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্যোগ যথেষ্ট নয়— জনসচেতনতা, সতর্কতা এবং সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন,
“মাদকের পাচার শুধু আইনত অপরাধ নয়— এটি একটি সামাজিক হুমকি। এর বিরোধিতা আমাদের যৌথ দায়িত্ব।”
মাদক পাচার বন্ধে আরপিএফ-এর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু লড়াই এখনও বাকি। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের ছোট উদ্যোগই বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই রিপোর্ট করুন — কারণ নীরবতা নয়, সচেতনতাই হচ্ছে সমাজ বাঁচানোর পথ।