দুই ভাই এ বার হাত বাড়ায় স্ত্রীদের উপার্জিত অর্থের দিকে৷ ২০১৬ সালে সম্বন্ধ করে তাঁদের বিয়ে হয় নিকি এবং কাঞ্চন নামে দুই বোনের সঙ্গে৷ দুই বোন বিয়ের পর বিউটি পার্লার এবং বুটিক শুরু করেছিলেন৷ অভিযোগ, সেখান থেকেও টাকা চুরি করত দুই ভাই৷ তাই নিয়ে লেগেই থাকত পারিবারিক অশান্তি৷ সেরকমই এক অশান্তির ফলস্বরূপ প্রাণ দিতে হয় নিকিকে৷
advertisement
তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পেরেছে নিকি এবং কাঞ্চনের সোশ্যাল মিডিয়ায় রিল প্রকাশ করা পছন্দ করত না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ব্যবসার প্রচারমূলক পোস্ট দেখলে রেগে যেত৷ নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েই ব্যবসা শুরু করেছিলেন দুই বোন৷ লভ্যাংশ থেকে তাঁরা সঞ্চয় করতেন নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে৷ সেখান থেকেই বিপিন টাকা চুরি করত বলে অভিযোগ মৃতার বাবার৷
২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর একই অনুষ্ঠানে নিকি এবং কাঞ্চন বিয়ে করেন যথাক্রমে বিপিন এবং তার ভাই রোহিতকে । দুই পরিবার সম্বন্ধ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নিকির কাকা বলেন যে এই বিয়েতে প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। “আমরা যা কিছু করতে পেরেছিলাম, গাড়ি, পোশাক, অলঙ্কার-সব দিয়েছিলাম। যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে, তখন একটি মোটরসাইকেল দাবি করা হয়৷ আমরা সেটাও দিয়েছিলাম” তিনি বলেন। তাঁর আরও অভিযোগ, বিপিন মদ্যপানে আসক্ত ছিল এবং প্রায়ই ঝগড়া করত। পরিবার পরে জানতে পারে যে বিয়ের বাইরে তার আরও একটি প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। প্রেমের পথে কাঁটা হিসেবে স্ত্রী নিকিকে সরিয়ে দিতেই বিপিন তাঁকে খুন করে বলে অভিযোগ৷
নিকির বোন কাঞ্চন বলেছেন, বিপিন এবং রোহিত প্রায়ই রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতেন এবং তাদের স্ত্রীদের ফোন ধরতেন না। “যদি আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করতাম তারা কোথায়, তারা রেগে যেত। তারা অন্য মহিলাদের সঙ্গে সময় কাটাত, এবং যখন আমরা তাদের প্রশ্ন করতাম, তারা আমাদের মারধর করত। আমাদের রাতগুলো কান্নাকাটি করেই কেটে যেত।”
নিকির বাবা ভিখারি সিং পায়লা-র একটি মার্সিডিজ আছে৷ অভিযোগ অনেক দিন ধরে বিপিন বিলাসবহুল গাড়িটি চাইছিলেন। ‘‘বিপিন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গাড়িটি দাবি করছিলেন। তার দাবি ছিল হয় মার্সিডিজ দিতে হবে, নয়তো ৬০ লক্ষ টাকা৷” সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন এক আত্মীয়।
নিকির কাকার অভিযোগ যে এই জন্মাষ্টমীতে, বিপিন তাকে মারধর করে এবং যখন সে তার পরিবারকে জানায়, তখন তার বাবা এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন কথা বলতে যায়। “আমরা বোনদের বাড়িতে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বিপিনের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরা আশ্বস্ত করেছিল যে এটি আর কখনও ঘটবে না। প্রতিবারই তারা এই ধরনের আশ্বাস দিয়েছিল।”
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে, নিকি, কাঞ্চন এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবা-মায়ের বাড়িতে থাকতে চলে এসেছিল। তার পর উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল এবং বিপিন ক্ষমা চেয়েছিলেন। হোলির পরে দুই বোন তাঁদের স্বামীদের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায়। নিকির ভাইয়ের আক্ষেপ, “আমরা তাদের একটি সুযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে তাদের মধ্যে এত নিষ্ঠুরতা ছিল।” তিনি বলেন যে দুই ভাই-ই তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে একই রকম জঘন্য আচরণ করত। অভিযোগ, নিজেদের মায়ের ইন্ধনেই দুই ভাই স্ত্রীদের নিগ্রহ করত৷
কাঞ্চনের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআর অনুসারে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিকিকে তাঁর স্বামী এবং শাশুড়ি দয়া একসঙ্গে আক্রমণ করেন। সে সময় কাঞ্চন বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। অভিযোগ, বিপিন ঝগড়ার মধ্যেই নিকির গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন : ট্রেনের এসি কামরার টয়লেটের ডাস্টবিনের ঢাকনা খুলতেই…ওটা কী বেরিয়ে এল! ভয়ে বোবা সাফাইকর্মীরা!
কাঞ্চনের রেকর্ড করা মর্মান্তিক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিপিন মারধর করছে নিকিকে। আরও একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে, জ্বলন্ত আগুন গায়ে নিয়ে নিকি সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন। তাঁকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তার পর তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে রেফার করা হয়৷ পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। কাঞ্চনের দাবি, তিনি অভিযুক্তদের বলতে শুনেছেন, “মার দো, কাম খতম করো (ওকে মেরে ফেলো, শেষ করে দাও)”।
নিকি এবং বিপিনের ছয় বছরের একটি ছেলে আছে৷ সে তার মায়ের নির্যাতন এবং মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে। ‘‘তারা প্রথমে মায়ের গায়ে কিছু একটা ছুড়ে দেয়। তার পর তাকে থাপ্পড় মারে, তার পর লাইটার দিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়,” নিকি মারা যাওয়ার পর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে তাঁর শিশুপুত্র।