লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতারা মোদির আমলে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, বিজেপি- আরএসএসের মধ্যেই এই অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়৷ সম্প্রতি রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো নেতার অনুপস্থিতিতে সেই বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছিল৷ তার কয়েক দিনের মধ্যেই আডবাণীর জন্য ভারত রত্ন ঘোষণা করে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি৷
advertisement
আরও পড়ুন: এল কে আডবাণী ভারতরত্ন, ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদি
ক্ষমতায় আসার পরই অবশ্য ২০১৫ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে পদ্ম বিভূষণ দিয়েছিল মোদি সরকার৷ আবার প্রণব মুখোপাধ্যায়, মদন মোহন মালব্যের মতো কংগ্রেস নেতাদেরও ভারত রত্ন সম্মান দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার৷ ফলে, রাজনৈতিক রং না দেখেই দেশের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদদের তারা প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে বলেও দাবি করতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি৷ কংগ্রেস আমলে যে সম্মান দেওয়া হয়নি বলে বহুদিন আগেই অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ কয়েক দিন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরি ঠাকুরকেও মরণোত্তর ভারত রত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার৷
নরেন্দ্র মোদি নিজে এ দিন দাবি করেছেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীর থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন৷ বিজেপিকে তৈরি করার পিছনেও আডবাণীর অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ১৯৯০ সালে রাম জন্মভূমি আন্দোলনে দলের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী৷ ১৯৮০ সালে দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও এই প্রবীণ নেতা৷ তিন বার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আডবাণী৷ ২০০৯ সালে তিনিই ছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর মুখ৷
বাজপেয়ী সরকারের আমলে উপ প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুদায়িত্ব সামলেছেন আডবাণী৷ আবার সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি৷ যদিও ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে আডবাণীর সক্রিয়তা কমতে থাকে৷ ওই বছরই মুরলী মনোহর যোশীর সঙ্গে আডবাণীকেও পথ প্রদর্শক অথবা মার্গদর্শক মণ্ডলের নেতা হিসেবে ঘোষণা করে বিজেপি৷
বাবরি মসজিদের জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়ে ১৯৯০ সালে গুজরাতের সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা করেন রথযাত্রা করেন লালকৃষ্ণ আডবাণী৷ সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এই রথযাত্রা থেকে উত্থান আডবাণীর৷ সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংয়ের নির্দেশে তাঁকে বিহারে আটকান মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব৷
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে আডবাণীর বিরুদ্ধে করসেবকদের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ উঠেছিল৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অভিযোগে আডবাণী সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে সিবিআই৷ যদিও ঘটনার ২৮ বছর পর ২০২০ সালে প্রমাণের অভাবে আডবাণীকে এই অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় নিম্ন আদালত৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে স্বতঃপ্রণোদিত এবং পূর্ব পরিকল্পিত নয় বলেই রায়ে জানায় আদালত৷ ২০২২ সালে নিম্ন আদালতের এই নির্দেশই বহাল রাখে হাইকোর্ট৷
বিজেপিতে আডবাণীর হাত ধরেই উঠে এসেছেন সুষমা স্বরাজ, প্রমোদ মহাজনের মতো একাধিক নেতা৷ যদিও এতকিছুর পরেও আডবাণীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন কোনওদিন সফল হয়নি৷ ২০১৩-১৪ সালে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মোদির উত্থান আডবাণীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে দাঁড়ি টেনে দেয়৷ মোদি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও আডবাণীর প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন৷ প্রতি বছর আডবাণীর জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে দেখাও করতে যেতেন প্রধানমন্ত্রী৷