রাজনৈতিক জীবন:
একবারই লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন মনমোহন সিং। কিন্তু হেরে যান। তারপর থেকে আর দাঁড়াননি। ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হওয়ার চার মাস পর তাঁকে প্রথমবার রাজ্যসভায় পাঠায় কংগ্রেস। টানা পাঁচবার অসম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে রাজ্যসভায় যান রাজস্থান থেকে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়।
advertisement
পরপর দু’বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মনমোহন সিং। ২০০৪ সালের ২২ মে থেকে ২০১৪ সালের ২৬ মে পর্যন্ত। তাঁর নেতৃত্বে একাধিক সামাজিক কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে ইউপিএ সরকার। এর মধ্যে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (মনরেগা) এবং প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ। তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বেই সরাসরি নগদ স্থানান্তর, আধার-এর মতো সংস্কারমূলক কার্যক্রম চালু হয়েছিল।
তিনি আর্থিক উদারীকরণের জনক। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, মনমোহন সিংয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি। ঘরে-বাইরে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন মনমোহন।
ক্ষেত্রেও।
আরও পড়ুন– এই ইন্টার কলেজেই পড়াশোনা করেছিলেন মনমোহন সিং, প্রাক্তনীর প্রয়াণে অশ্রুসিক্ত হলদোয়ানি
তবে মনমোহন জমানায় একের পর এক দুর্নীতিও প্রকাশ্যে আসে। ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি। বিশেষ করে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষ কয়েকটি বছর মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্নীতির জোড়া ফলায় ল্যাজেগোবরে দশা হয় ইউপিএ সরকারের। বিরোধীরা তাঁকে ‘দুর্বল’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কটাক্ষ করতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি।
অকৃত্রিম শিক্ষাবিদ:
১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন মনমোহন সিং। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন গ্রামের স্কুলে। ১৯৫৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ অর্থনীতিতে ডি.ফিল করেন। এরপর পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্সে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন।
১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রকে যোগ দেন মনমোহন। ১৯৭২ সালে অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। এরপর অর্থ মন্ত্রকের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ইউজিসি-এর চেয়ারম্যানের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। অল্প সময়ের জন্য জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন সচিবালয়েও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০-এর মধ্যে জেনেভায় সাউথ কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
অর্থমন্ত্রী:
পিভি নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মনমোহন সিং। স্বাধীনতার পর প্রথমবার তাঁর হাতেই ভারতীয় অর্থনীতি আমূল বদলে যায়। মনমোহন যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, তখন ভারতের টালমাটাল অবস্থা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় তলানিতে। মুদ্রাফীতি চড়চড় করে বাড়ছে। সরকারের হাঁসফাঁস দশা। দায়িত্ব নিয়েই বিশ্বের দরবারে ভারতীয় অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করে দিলেন মনমোহন সিং। তাঁর হাত ধরেই উদার অর্থনীতির ছোঁয়া লাগল দেশে।
বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বৃদ্ধির অর্থনীতির দেশ ভারত। অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশও। তবে এর শুরুটা হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের হাত ধরেই। তিনিই বেলাইন হওয়া ভারতীয় অর্থনীতিকে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। বলা ভাল দিশা দিয়েছিলেন। আজও তাঁর দেখানো পথেই এগিয়ে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতি। শুধু অর্থনৈতিক সংস্কার নয়, তাঁর হাত ধরেই অর্থনৈতিক সাফল্যের পথেও এগিয়েছে দেশ। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসেবে রুপির অবমূল্যান, আমদানি শুল্ক কমানো, রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, লাইসেন্স রাজ খতম করার মতো একাধিক বড় পদক্ষেপ করেছিলেন। যার সুফল আজও ভোগ করছে ভারতবাসী।