গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূর অভিভাষণের পরে ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণ দেয় তৃণমূল। আর এই ভাষণের সিংহভাগ জুড়েই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। লোকসভায় তৃণমূলের তরফে বক্তৃতা করেন দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
আরও পড়ুন: সংসদে মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনায় তৃণমূল, কথা বলতে দফায় দফায় বাধা মহুয়া মৈত্রকে
advertisement
এদিন ধন্যবাদজ্ঞাপন ভাষণেই মহুয়া মৈত্র অভিযোগ তোলেন, এক ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে সঙ্গী হন এবং তাঁর হাতেই সরকারের রিমোট কন্ট্রোল থাকে। তা কেন থাকে? আর সাংসদের এহেন মন্তব্য করার পরেই তাঁর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করতে শুরু করে ট্রেজারি বেঞ্চ। তাঁর কথা বলার সময় বারবার বাধা দিতে দেখা যায় বিজেপি সাংসদদের।
সেই সময় সভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ভর্তহারি মেহতাবকে মহুয়া আবেদন করেন, তিনি যেন বিক্ষোভরত বিজেপি সাংসদদের শান্ত করেন, তাঁকে কথা বলতে দেন। যদিও তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহুয়া বলেন, "কোনও সদস্য যাতে নির্বিঘ্নে তাঁর ভাষণ শেষ করতে পারেন, সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার।" এরপরেই বিক্ষোভরত বিজেপি সাংসদদের উদ্দেশে ভর্তহরি মেহতাবকে বলতে শোনা যায়, "আপনারা শান্ত হন। এবার তো চুপ করুন। আমার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমি আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম।"
যদিও বিজেপি সাংসদদের শোরগোল তারপরেও থামে না বলে অভিযোগ। এরপরেই বিরক্ত হয়ে আসনে বসে পড়তে যান মহুয়া। তখনই নাকি তিনি একটি অসংসদীয় শব্দ উচ্চারণ করেন। তিনি তাঁর আগেই বক্তৃতা করছিলেন বলে, তাঁর মাইক অন ছিল। তাই সেই অসংসদীয় শব্দ শুনতে পান সংসদীয় অধিবেশনে উপস্থিত সকলেই।
এরপরেই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অপশব্দ প্রয়োগের অভিযোগে সরব হয় বিজেপি। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী জানান, নিজের দলের সাংসদের এমন মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চইতে হবে তৃণমূলকে। এছাড়া, এই নিয়ে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানান।
যদিও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ নিয়ে বুধবার প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁর কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মুখেও। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এদিন তাঁদের সাংসদ রমেশ বিধুরিকে রেখেইছিল তাঁকে ক্রমাগত হেনস্থা করার জন্য।
মহুয়া বলেন, "আমার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই আমি ক্ষমা চাইব না প্রয়োজনে ওরা ক্ষমা চাক। আমাকে ক্রমাগত বাধা দেওয়া হচ্ছিল। কথা বলতে দেওয়া হচ্ছিল না। বিজেপি বলছে একজন মহিলা কী করে এমন শব্দ উচ্চারণ করতে পারে! আমাকে কি হেনস্থার যথাযথ উত্তর দেওয়ার জন্য একজন ছেলে হতে হবে? তাহলে তো বলব পিতৃতান্ত্রিকতা চলছে।"
এরপরেই মহুয়ার ঝাঁঝালো উত্তর, "আমায় দিল্লির প্রতিনিধি ক্রমাগত হেনস্থা করে যাচ্ছিলেন। ওঁরা যদি আমার বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ আনেন আমিও আমার কথা বলব। আমি তো অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, বিজেপি আমাকে সংসদীয় বিধি শেখাচ্ছে।"
অন্যদিকে, মহুয়া মৈত্রের এ হেন মন্তব্য তৃণমূলের সংস্কৃতি সামনে এনেছে বলে এদিন তোপ দাগেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, "আরও একবার প্রমাণ করে দিল বাঁশ ঝাড় একই, বাঁশ আলাদা। তৃণমূল কংগ্রেস আজ বাঙালির মাথা হেঁট করে দিল।"