সংসদের একাধিক ভাষণে, সাংবাদিকদের সামনে করা মন্তব্যে, মহুয়া মৈত্রের কথাতে একাধিকবার উঠে এসেছে বিভিন্ন মনীষি, গুণীজনের বলে বা লিখে যাওয়া বিভিন্ন উদ্ধৃতি৷ এদিনও তাঁর কথায় ঘুরে ফিরে এল সুকান্ত ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷
গত বৃহস্পতিবারই স্পিকার জানিয়েছিলেন, এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। অর্থাৎ, মহুয়ার সাংসদ পদ থাকছে না খারিজ হচ্ছে, তা শুক্রবারেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আশঙ্কাই মিলে গেল শেষমেশ৷ এদিন ‘ঘুষের বদলে প্রশ্ন’ বিতর্কে এথিক্স কমিটির সুপারিশ মেনে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ করার কথা ঘোষণা করলেন লোকসভার অধ্যক্ষ৷ যে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে মহুয়া মৈত্র ফের দাবি করেছেন, ‘‘কোনও প্রমাণ ছাড়াই আমাকে বহিষ্কার করা হল।’’
advertisement
আরও পড়ুন: সাংসদ পদ খারিজই হল মহুয়ার, কমিটির রিপোর্ট পেশের পরেই লোকসভা থেকে বহিষ্কার
তাঁর দাবি, নগদ, বা উপহার কোনও ভাবেই কোনও ঘুষ বা লেনদেন হওয়ার কথা প্রমাণ করতে পারেনি এথিক্স কমিটি৷ এমনকি, যে দু’জন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, এক জন ব্যবসায়ী এবং আরেকজন তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী, তাঁদেরকেও পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি৷ এমনকি, সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে বা পরে মহুয়া মৈত্রকে আত্মপক্ষ সমর্থনে সংসদেও কিছু বলতে দেওয়া হয়নি৷ এ সমস্ত কিছু নিয়েই এদিন নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মহুয়া৷ সপাট বলেন, ‘‘এখন আমি ৪৯৷ এখনও ৩০ বছর আপনাদের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে লড়াই করব এবং বাইরে লড়াই করব৷ রাস্তায় লড়াই করব৷’’ এরপরেই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের ‘বোধন’ কবিতার এই ক’টি লাইন উদ্ধৃত করেন মহুয়া৷ বলেন,
‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই
স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের
চিতা আমি তুলবোই।’
শুধু মহুয়া মৈত্র নয়, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন বক্ৃততায়৷ এমনকি, রাজভবনের সামনে ধর্না কর্মসূচির শেষ দিনে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্ৃতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই কবিতার এই লাইনগুলোই বলতে শোনা গিয়েছিল৷
এদিন বিজেপি-কে আক্রমণ করতে গিয়ে জাতীয় সঙ্গীতও উদ্ধৃত করেন মহুয়া৷ তাঁকে বলতে শোনা যায়, পঞ্জাব, দ্রাবিড়, উৎকল, বঙ্গ- কোথাও বিজেপি ক্ষমতায় নেই। তাহলে কোথায় শাসন করবেন তাঁরা? কোথা থেকে পাবেন এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা?
আরও পড়ুন: ‘শেষ দেখে ছাড়ব!’ বহিষ্কারের পরই হুঙ্কার মহুয়ার
ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন কাণ্ডের তদন্ত চলার সময় থেকেই মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের সাংসদরা৷ এ দিনও সংসদে মহুয়ার বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরেই সংসদেও মহুয়ার হয়ে জোর সওয়াল করেন বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিরা৷ মহুয়ার বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের ঘোষণা হতেই বিরোধী দলের অন্যান্য সাংসদদের সঙ্গে ওয়াক আউট করেন সনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধিরা৷ এমনকি, সংসদের বাইরে গান্ধিমূর্তি সামনে মহুয়া যখন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলছেন, তখন তাঁর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে, এবং মহুয়া নানা মন্তব্যে ইতিবাচক ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়তে দেখা গিয়েছে সনিয়া গান্ধিকে৷