মাছকে স্বাস্থ্যকর নন-ভেজ ফুড মনে করে এর প্রতিটি অংশ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক ৪২ বছরের ব্যক্তি এমন এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, যা শুনলে অনেকেই মাছ খাওয়া নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবেন আপনাকে!
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর ঘটনা! পুলিশকে ধাক্কা দেওয়ার পর ২৫ ফুট টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল গাড়ি, তারপর যা হল…
advertisement
ইন্দোরের সংগম নগরের লক্ষ্মীপুরা কলোনির বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী দুর্গাপ্রসাদ সুনানিয়ার হঠাৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে জানা যায়, তার লিভার ও কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তার প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়।
২৪ ডিসেম্বর দুর্গাপ্রসাদ নিজের বাড়িতে মাছ রান্না করে খেয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে মনে হয়েছিল এটি সাধারণ ফুড পয়জনিং, তাই তিনি বমি ও ডায়রিয়ার ওষুধ খেয়েছিলেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পরও অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে, যার ফলে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান।
পরীক্ষা করার পর জানা যায়, দুর্গাপ্রসাদ ভুলবশত মাছের পিত্তথলি খেয়ে ফেলেছিলেন, যা তার লিভার ও কিডনির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
বেসরকারি হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়সিং অরোরা জানান, চিকিৎসার সময় জানা যায়, রোগী ভুল করে মাছের পিত্তথলি খেয়ে ফেলেছিলেন। এর ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার লিভার এনজাইম (SGOT ও SGPT) ৩০-৫০-এর পরিবর্তে ৩০০০-৪০০০-তে পৌঁছে গেছে! এছাড়া, কিডনির ক্রিয়েটিনিন মাত্রা ৮-৯ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং তার শরীরের ওজনও দ্রুত বেড়ে যায়।
হাসপাতালে স্টেরয়েড ও ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে দুর্গাপ্রসাদের চিকিৎসা করা হয়। প্রথম ৪টি ডায়ালাইসিসের পর তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে, যার ফলে ডায়ালাইসিস বন্ধ করা হয়। সার্জারি ছাড়াই উপযুক্ত ওষুধ ও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে অবশেষে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৫ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।
ডা. অরোরা জানান, মাছের পিত্তথলিতে সায়ানোপ্যারোল (Cyprinol) নামে একটি বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করলে দ্রুত লিভার ও কিডনির ক্ষতি করে। সাধারণত, পিত্তথলি বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু এর বিষ শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এই ধরনের ঘটনা সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, তবে মধ্য ভারতেও এমন ঘটনা বিরল নয়। তাই মাছের কোনো অংশ না বুঝে না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছের পিত্তথলি খাওয়া প্রাণঘাতী হতে পারে। যদি কারও হঠাৎ বমি, ডায়রিয়া বা লিভার-কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তার খাওয়া খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা না করালে বিপদ বাড়তে পারে। তবে, সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব!