শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কুলীনগ্রামে। পুরী যাওয়ার পথে সপারিষদ এই কুলীনগ্রামে এসেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর নির্দেশেই হরিদাস ঠাকুর এই কুলীনগ্রামে এসে সাধনভজন শুরু করেন। এরপর পুরী যাওয়ার পথে এই গ্রামে এসে তিনদিন ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। এখান থেকেই পুরী যান তিনি।
আরও পড়ুন: বিহারে খুন প্রতিবাদী সাংবাদিক, সেই সূত্রে চন্দননগরে ঘটে গেল বড় ঘটনা! তুমুল শোরগোল
advertisement
চৈতন্যদেবের আদেশে লক্ষ্মীকান্ত বসু কুলীনগ্রাম থেকে সেই রথ টানার দড়ি নিয়ে পৌঁছেছিলেন পুরীতে। পরবর্তী বেশ কয়েক বছর লক্ষ্মীকান্ত পুরীতে পট্টদড়ি নিয়ে গেলেও পরবর্তী সময় তিনি আর যেতে পারেননি। তার বদলে তিনি গ্রামে জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এখানে রথযাত্রা শুরু হয়।
কয়েকশো বছর ধরে পট্টদড়ি পাঠানোর পরম্পরা চলে আসার পর আস্তে আস্তে তা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে কুলীনগ্রাম থেকে পাট ও শেন দিয়ে তৈরী বিশেষ ওই দড়ির উপকরণ একটি প্যাকেটে ভরে পাঠানো হত পুরীতে। মূল দড়ির সঙ্গে ওই উপকরণকে ছুঁইয়ে নেওয়া হত। কিন্তু এরপরই বসু পরিবারের সদস্যরা কুলীনগ্রাম থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। ফলে দড়ির ওই উপকরণও পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে কুলীনগ্রামের রথযাত্রা উৎসব ব্যাপক প্রসার লাভ করে। আজও ঐতিহ্য মেনে কুলীনগ্রামের এই রথ টানা হয়। বসু পরিবারের উদ্যোগেই কুলীনগ্রামে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে যে রথটি টানা হয় তার বয়স প্রায় ষাট বছর। কাঠের তৈরি রথটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় ১৬ ফুট। রয়েছে ৬টি লোহার চাকা। তিনটি ধাপ রয়েছে রথে। পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট এই রথের উপরের ধাপে থাকেন জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম। রথের দিন গ্রামের মাঝে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির থেকে বিশেষ পূজো অর্চনার মধ্যে দিয়ে রথকে টেনে আনা হয় গ্রামের রথতলায়। আবার ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় জগন্নাথ মন্দিরে। উল্টোরথেও একইভাবে রথ টানা হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে আজও মেলা বসে কুলীনগ্রামে।
শরদিন্দু ঘোষ