১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া এই কার্বাইড গান বিক্রি হয়েছে খেলনার মতো৷ কিন্তু এর আওয়াজ হার মানাবে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দকেও৷ হাসপাতালে এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সতেরো বছর বয়সি নেহা৷ সেই কিশোরী কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, ‘‘আমরা একটি ঘরে তৈরি কার্বাইড বন্দুক কিনেছিলাম। যখন এটি বিস্ফোরিত হয়, তখন আমার একটি চোখ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’’
advertisement
আর একজন আক্রান্ত রাজ বিশ্বকর্মা স্বীকার করেছেন, ‘‘আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখে বাড়িতে একটি বাজি তৈরির বন্দুক তৈরি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটি আমার মুখে বিস্ফরিত হয় এবং আমি আমার চোখ হারিয়ে ফেলি।’’ বিদিশা জেলার পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে এই বন্দুকগুলি বিক্রির জন্য ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। ইন্সপেক্টর আর কে মিশ্র বলেন, ‘‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই কার্বাইড বন্দুকগুলি বিক্রি বা প্রচারের জন্য দায়ীদের আইনি পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’’
ভোপাল, ইন্দোর, জব্বলপুর এবং গোয়ালিয়রের হাসপাতাল জুড়ে, চক্ষু চিকিৎসার ওয়ার্ডগুলিতে এই বন্দুকের আঘাতে আহত অনেক শিশুর চিকিৎসা চলছে। শুধুমাত্র ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালেই ৭২ ঘণ্টায় ২৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। ডাক্তাররা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অভিভাবকদের সতর্ক করছেন৷ বলেছেন, ‘‘এটি কোনও খেলনা নয়, বরং একটি ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক।’’ হামিদিয়া হাসপাতালের সিএমএইচও মনীশ শর্মা বলেন, ‘‘এই যন্ত্রটি চোখের সরাসরি ক্ষতি করে। বিস্ফোরণের ফলে ধাতব টুকরো এবং কার্বাইডের বাষ্প নির্গত হয় যা রেটিনা পুড়িয়ে দেয়। আমরা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চিকিৎসা করছি যেখানে শিশুদের চোখের পিউপিল ফেটে যায়, যার ফলে স্থায়ী অন্ধত্ব হয়।’’
কিছু রোগীর আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে৷ এবং অনেকেরই হয়তো আর কখনও পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া যাবে না। জানা গিয়েছে, শিশুরা প্লাস্টিক বা টিনের পাইপ ব্যবহার করে ‘কার্বাইড বন্দুক’ তৈরি করছে৷ সেগুলোতে বারুদ, দেশলাইয়ের কাঠির বারুদের অংশ এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে একটি গর্তের মধ্য দিয়ে জ্বালাচ্ছে৷ ফলে কার্যত রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং কৌতূহলের একটি মারাত্মক মিশ্রণ।
যখন মিশ্রণটি জ্বলে ওঠে, তখন এটি একটি তীব্র বিস্ফোরণের কারণ হয়, যা ধ্বংসাবশেষ এবং জ্বলন্ত গ্যাসকে চালিত করে, প্রায়ই সরাসরি মুখ এবং চোখে আঘাত করে। পুলিশ বলছে, স্থানীয় মেলা এবং রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে বন্দুকগুলি ‘মিনি কামান’ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, কোনও নিরাপত্তা বিধি ছাড়াই। এই বিপজ্জনক প্রবণতার পেছনে আসল কারণ হল ইনস্টাগ্রাম রিল এবং ইউটিউব শর্টস। ‘ফায়ারক্র্যাকার গান চ্যালেঞ্জ’ নামে ট্যাগ করা ভিডিওগুলি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কিশোর-কিশোরীদের লাইক এবং ভিউয়ের জন্য বন্দুক ছুড়তে দেখা যাচ্ছে।