‘ইক্ষাক’ — যার অর্থ ‘দিশারী’ বা ‘গাইড’ — হল চারটি সার্ভে ভেসেল লার্জ শ্রেণির জাহাজের তৃতীয়টি। এই জাহাজটি ১৪ আগস্ট ২০২৫-এ নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, আর চতুর্থ জাহাজটির ফিটিং-আউটের কাজ এখন চলছে। এর আগে একই শ্রেণির প্রথম জাহাজ আইএনএস সন্ধায়ক ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় জাহাজ আইএনএস নির্দেশক ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর কমিশন হয়েছিল।
advertisement
এই কমিশনিং এমন এক সময়ে হল যখন GRSE সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। অক্টোবর মাসে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আইএনএস আন্দ্রোথ, একটি অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার শ্যালো ওয়াটার ক্রাফট, এবং আগস্টে কমিশন হয়েছিল উন্নত গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট আইএনএস হিমগিরি। মাত্র আড়াই মাসে তিনটি প্রধান যুদ্ধজাহাজ কমিশন হওয়া ভারতীয় জাহাজনির্মাণে এক মাইলফলক।
আইএনএস ইক্ষাক হল GRSE-এর তৈরি ৮০৩-তম জাহাজ এবং ১১৪-তম যুদ্ধজাহাজ। নৌবাহিনীতে এটি GRSE-এর ৭৬-তম সরবরাহকৃত যুদ্ধজাহাজ — এমন রেকর্ড দেশের অন্য কোনও শিপইয়ার্ডের নেই। ১৯৬১ সালে GRSE-এর হাতে নৌবাহিনীর প্রথম দেশীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস অজয় নির্মিত হওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক টিকে রয়েছে ছয় দশক ধরে। আজ সেই সহযোগিতাই “ক্রেতার নৌবাহিনী” থেকে “নির্মাতার নৌবাহিনী”-তে রূপান্তরের প্রতীক হয়ে উঠেছে — সরকারের আত্মনির্ভরতার (Atmanirbhar Bharat) নীতির বাস্তব প্রতিফলন।
১১০ মিটার লম্বা এই জাহাজটি নৌবাহিনীর জন্য অপরিহার্য জরিপ তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উপকূল, বন্দর, ও গভীর সমুদ্রের তলদেশের পূর্ণাঙ্গ জরিপ পরিচালনা, নৌযান চলাচলের পথ নির্ধারণ ও সমুদ্র সীমার পরিমাপের কাজেই মূলত ব্যবহৃত হবে এই শ্রেণির জাহাজগুলি। সংগৃহীত তথ্য ও মানচিত্র শুধু নৌবাহিনীর নয়, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উন্নত সেন্সর ও যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত এই Sandhayak-class জাহাজগুলি একদিকে যেমন নৌবাহিনীর গবেষণা ও সার্ভে কাজকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, অন্যদিকে প্রয়োজনে মানবিক সাহায্য ও দুর্যোগ মোকাবিলা (HADR) অভিযানে ব্যবহার করা যাবে। জাহাজগুলিতে একটি হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে; এগুলি হালকা লড়াই, উদ্ধার অভিযান এবং হাসপাতাল জাহাজ হিসেবেও কাজ করতে পারে।
আইএনএস ইক্ষাকের ডিজাইন ও নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে GRSE-এর নিজস্ব প্রযুক্তিতে করা হয়েছে। দুটি শক্তিশালী মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন, ফিক্সড-পিচ প্রপেলার, এবং বো-স্টার্ন থ্রাস্টারসহ এই জাহাজটি নিম্ন গতিতে জরিপ পরিচালনার জন্য আদর্শ। ‘ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন’ প্রযুক্তিতে নির্মিত এই জাহাজটি ভারতীয় শ্রেণিবিন্যাস সংস্থা (IRS)-এর সব মানদণ্ড মেনে তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে. ত্রিপাঠি বলেন, “নৌবাহিনীর সার্ভে জাহাজগুলি সমুদ্রকে আমাদের কাছে পরিচিত, নিরাপদ ও নৌচলাচলের উপযোগী করে তোলে। তারা প্রতিটি মাইলে আমাদের ‘অজানা’-কে ‘জানা’-তে পরিণত করে।” তিনি GRSE-এর সিএমডি কমোডর পি.আর. হরি ও তার দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আপনাদের নকশা, দক্ষ তত্ত্বাবধান ও মান-নিষ্ঠা ভারতীয় জাহাজনির্মাণে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।”
কমোডর পি.আর. হরি বলেন, “ইক্ষাকের কমিশনিং প্রমাণ করছে যে GRSE উন্নত সার্ভে ও রিসার্চ ভেসেল নির্মাণে ভারতের একমাত্র শিপইয়ার্ড। আমরা বর্তমানে অ্যাডভান্সড হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে, ওসিয়ান রিসার্চ, কোস্টাল ও অ্যাকোস্টিক রিসার্চ জাহাজ নির্মাণ করছি।”
বর্তমানে GRSE নৌবাহিনীর জন্য আরও ১৩টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছে — যার মধ্যে রয়েছে দুটি P17A গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট, একটি SVL, ছয়টি অ্যান্টি-সাবমেরিন শ্যালো ওয়াটার ক্রাফট এবং চারটি নেক্সট জেনারেশন অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল। এছাড়া পাঁচটি নেক্সট জেনারেশন করভেটের চুক্তিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই কমিশনিং শুধু GRSE-এর জন্য নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার ইতিহাসে আরেকটি গর্বের অধ্যায় যোগ করল।
