এক্ষেত্রে হাইড্রোজেনকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে হবে। প্রথমত, দেশের বিদ্যুর পরিষেবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কয়লানির্ভর। এক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালনিগুলিকে সঠিক গন্তব্য দেয় হাইড্রোজেন। পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কমায়। তাছাড়া তেলের ক্রমবর্ধমান মূল্যের মোকাবিলা করতে একটা সমাধানের পথও দেখাতে পারে হাইড্রোজেন। দ্বিতীয়ত, এটি অত্যন্ত হাল্কা। শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষমতাও যথেষ্ট। পেট্রোলের থেকে কয়েকগুণ শক্তিশালী এই গ্যাস।
advertisement
এবার নানা ধরনের হাইড্রোজেন সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। মূলত তিন ধরনের হাইড্রোজেন লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল গ্রে হাইড্রোজেন, ব্লু হাইড্রোজেন ও গ্রিন হাইড্রোজেন।
*গ্রে হাইড্রোজেন- জীবাশ্ম জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাস তথা হাইড্রোকার্বন থেকে পাওয়া যায় গ্রে হাইড্রোজেন। এর বাই প্রোডাক্ট হল কার্বন ডাই অক্সাইড (Co2)।
*ব্লু হাইড্রোজেন- জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পাওয়া যায় ব্লু হাইড্রোজেন। বাই প্রোডাক্ট হল কার্বন ডাই অক্সাইড (Co2) ও CO।
*গ্রিন হাইড্রোজেন- সৌরশক্তি, বাতাস ও নানা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে পাওয়া যায় গ্রিন হাইড্রোজেন। এর বাই প্রোডাক্ট হল জল ও জলীয় বাষ্প।
এবার একটু ইলেকট্রিক ভেহিকেল বা EV সম্পর্কে এবং তার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক। অটো-এক্সপার্টদের মতে, হাইড্রোজেন পাওয়ার ভেহিকেল তথা হাইড্রোজেন গ্যাসচালিত গাড়িগুলি তথাকথিত ইলেকট্রিক ভেহিকেলগুলির থেকে অনেক ভালো। এক্ষেত্রে সবার আগে EV-এর নানা ধরণ সম্পর্কে জানতে হবে।
*HEV- হাইব্রিড ইলেকট্রিক ভেইকেলস (Hybrid Electric Vehicles)। হাই ফুয়েল ইকোনমি যুক্ত এই গাড়িতে পেট্রো চালিত গাড়ির থেকে জ্বালানির ব্যবহার অনেকটা কম।
*PHEV- প্লাগ-ইন হাইব্রিড ভেইকেলস (Plug-in Hybrid Vehicles)। এক্ষেত্রে ব্যাটারি ও পেট্রোল দু'টির সুবিধা পাওয়া যায়।
*BEV- ব্যাটারি পাওয়ারড ইলেকট্রিক ভেইকেলস (Battery-powered Electric vehicles)। এটি সম্পূর্ণ ভাবে ইলেকট্রিক গাড়ি। ব্যাটারি রিচার্জেবল। পেট্রোলের ব্যবহারের কোনও প্রশ্ন নেই।
*FCEV- ফুয়েল-সেল ইলেকট্রিক ভেইকেলস (Fuel-Cell Electric Vehicles)। এটি সম্পূর্ণ ভাবে ইলেকট্রিক গাড়ি। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত। রি-ফুয়েল করা যায়। তবে BEV-এর মতো রিচার্জেবল নয়।
তবে, এর কিছু নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ইতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে। এক্ষেত্রে প্রায় জিরো কার্বন ফুটপ্রিন্ট লক্ষ্য করা যায়। গাড়িগুলির রেঞ্জও মন্দ নয়। প্রতি চার্জে অনেক দূর পর্যন্ত পরিষেবা দিতে পারে গাড়িগুলি। এক্ষেত্রে Tesla S মডেলের একটি গাড়ি প্রতি চার্জে ৫৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে পারে। এক্ষেত্রে CNG ট্যাঙ্কের মধ্যে গ্যাস স্টোর করে গাড়ির মধ্যে যথাযথ ভাবে রেখে দেওয়া হয় এই ট্যাঙ্ক। এতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। একটি বড় বিষয় হল, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির থেকে ওজনেও বেশ হাল্কা হাইড্রোজেন। এক্ষেত্রে ট্রাক বা কমার্সিয়াল ভেহিকেলের জন্য সব চেয়ে ভালো হতে পারে এই অলটারনেটিভ হাইড্রোজেন ফুয়েল সিস্টেম। পাশাপাশি মাত্র ৫ মিনিটেই রি-ফুয়েল করা যায়।
এবার জেনে নেওয়া যাক নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে। সব চেয়ে বড় বিষয় হল অলটারনেটিভ হাইড্রোজেন ফুয়েল সিস্টেমের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। যা এখনও খুবই অল্প পরিসরে সীমিত। বর্তমানে গোটা বিশ্বে ৫০০টিরও কম হাইড্রোজেন স্টেশন রয়েছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ। অত্যন্ত উচ্চ চাপ অর্থাৎ ৭০০ bar পর্যন্ত চাপে স্টোর করা হয় হাইড্রোজেনকে। এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন ট্যাঙ্ক থেকে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রবল। তাই সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দৃঢ় করতে হবে। এগুলির পাশাপাশি গাড়িপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সদর্থক ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো নয়। এক্ষেত্রে নাম উঠে আসছে Honda, Toyota ও Hyundai-এর। ৮ মিলিয়ন EV-এর তুলনায় ২০২০ সালে রাস্তায় হাইড্রোজেন FCEV-এর সংখ্যা ছিল ২৫,০০০।
তাই এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন আর যথাযথ পদক্ষেপই অলটারনেটিভ হাইড্রোজেন ফুয়েল সিস্টেমকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য দান করবে।
