ঘটনা যে কাউকে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ নিহতরা হলেন ওই যুবকের তার ছোট ভাই আফসান, ঠাকুমা সালমা বিবি, কাকা লতিফ, কাকিমা শাহিদা এবং প্রেমিকা ফারসানা। তবে তার মা শেমি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন: বিয়েতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা! ‘বিদায়’-এর সময় দিদির চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল ভাই, নিমেষে শেষ সব…
advertisement
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আফান চরম আর্থিক সংকট ও ঋণের চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তার বাবা আবদুল রহিম সৌদি আরবে কাজ করতেন, কিন্তু ব্যবসায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন। এই কারণে তিনি পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে পারেননি, যার ফলে বাড়ির আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
ঘটনার দিন, আফান প্রথমে নিজের মায়ের উপর হামলা চালায়। এরপর সে ঠাকুমার বাড়িতে গিয়ে তাকে হত্যা করে এবং তার সোনার হার চুরি করে মাত্র ১৫,০০০ টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর কাকা ও কাকিমার কাছে টাকা চাইতে গেলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। তখন তাদেরও নির্মমভাবে হত্যা করে সে। পরে নিজের ছোট ভাই ও প্রেমিকাকেও হত্যা করে আফান।
আরও পড়ুন: মদ খেয়ে মায়ের কাছে তিন হাজার টাকা চেয়েছিল ছেলে! না দেওয়ায় মায়ের যা অবস্থা হল…শিউরে উঠবেন…
এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর, আফান বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, তবে সে বেঁচে যায়। পরে সে নিজেই ভেঞ্জারামুডু থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং হত্যার কথা স্বীকার করে। পুলিশ তার কাছ থেকে হত্যার অস্ত্র উদ্ধার করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে এই অপরাধে সে একাই যুক্ত ছিল।
হত্যাকাণ্ডের সময় আফানের বাবা আবদুল রহিম সৌদি আরবে ছিলেন এবং সেখানকার আইনি ও আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। ঘটনার পর তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি কেরালায় ফিরে আসেন।
রহিম ছেলের স্বীকারোক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার দাবি, তার ব্যবসা মহামারির আগে পর্যন্ত ভালোই চলছিল। পরে লোকসানের মুখে পড়েন এবং ঋণ নিতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, “আমি এক সৌদি স্পন্সরের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতাম। প্রতি মাসে আমাকে ৬,০০০ রিয়াল ভাড়া দিতে হত। প্রথমে ভাল আয় হত৷ আমি বাড়ি, জমি সব কিনেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারির পর পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। এরপর সুদে টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করি এবং আস্তে আস্তে ঋণ শোধ করছিলাম। আমি ইয়েমেনের কিছু লোকের কাছ থেকেও টাকা ধার নিয়েছিলাম, দোকানের লাইসেন্স ও সাক্ষীর ভিত্তিতে। কিন্তু আমার ব্যবসা ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে।”
রহিম আরও জানান, “আমি কখনও পুলিশকে বলিনি যে আমার ওপর ৬৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। দেশে আমার মোট ঋণ মাত্র ৫ লাখ টাকা। আমি সব ঋণ শোধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার আগেই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল।”
রহিম তার ছেলেকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভালো চাকরির সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি জানান, “সে দু’মাস আগে কাজাকুটে জলের ট্যাংকার চালানোর কাজ শুরু করেছিল। সকালে বেরিয়ে রাতে ১০-১১টার মধ্যে ফিরে আসত। পাশাপাশি সে ফুড ডেলিভারি বয়ের কাজও করছিল। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সে খুব পরিশ্রম করছিল এবং বলেছিল যে আমার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের দরকার নেই। তবে আমি জানি না, সে বন্ধুদের সঙ্গে কোনও বিপথে গিয়েছিল কি না।”
ছেলের প্রেমঘটিত সম্পর্কে রহিম বলেন, “আমার স্ত্রী বলেছিল যে সে একজন মেয়েকে পছন্দ করত। আমার ভাগ্নি তাকে মেয়েটির সঙ্গে বাইকে চড়তে দেখেছিল। আমি বিষয়টি হালকাভাবেই নিয়েছিলাম, কারণ এখনকার দিনে এ সব স্বাভাবিক।”
এই ঘটনায় কেরালা পুলিশ বিস্তারিত তদন্ত চালাচ্ছে। আফানের স্বীকারোক্তি কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল।