গত ১৩ জুলাই দিল্লির মাতা রূপরানি মাগ্গো হাতপাতালে করণ দেবকে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা৷ চিকিৎসকরা করণকে মৃত ঘোষণা করেন৷ তাঁর দাবি ছিল দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন করণ৷ পরিবার যেহেতু বিশ্বাস করেছিল এটা দুর্ঘটনা, তাই কোনও ময়না তদন্তও হয়নি৷
তবে, নিহতের বয়স তুলনামূলকভাবে কম এবং তার মৃত্যুর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য জোর দিয়েছিল, যদিও সুস্মিতা এবং তাঁর কথিত প্রেমিক – করণের খুড়তুতো ভাই রাহুল আপত্তি জানিয়েছিলেন। পরে, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হরিনগরের দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
advertisement
এদিকে, ঘটনার তিন দিন পর, নিহতের ছোট ভাই কুণাল পুলিশকে তাঁর সন্দেহের কথা জানান যে করণকে তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের খুড়তুতো ভাই খুন করেছে। এমনকি তিনি সুস্মিতা এবং রাহুলের মধ্যে একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যাটের প্রমাণও দিয়েছেন, যেখানে তাঁরা হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
হত্যার চক্রান্ত-চ্যাট :
সেই চ্যাট থেকে জানা গিয়েছে সুস্মিতা এবং রাহুল ঘুমের ওষুধের প্রভাবে মৃত্যু সম্বন্ধে জানতে গুগলে সার্চ করেছিলেন৷ পর্যাপ্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ালে মৃত্যু হতে কতটা সময় লাগবে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন প্রেমিক যুগল৷ ওই চ্যাট অনুসারে গত ১২ জুলাই রাতে করণের রাতের খাবারে ১৫ টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার পর করণ ও সুস্মিতা অপেক্ষা করছিলেন কত ক্ষণে করণ অচৈতন্য হবেন৷
করণ যখন অচেতন অবস্থায় শুয়ে ছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী প্রেমিককে জানান যে তাঁর ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে। কিন্তু যখন ওষুধগুলি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর না হয়, তখন সুস্মিতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
“ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর কতক্ষণ মৃ্ত্যু হয়, একবার দেখে নাও। খাবার খাওয়ার পর তিন ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে। বমিও হয়নি। আর এখনও মৃত্যুও হয়নি। তাহলে আমাদের কী করা উচিত, কিছু একটা পরামর্শ দাও,” প্রেমিক রাহুলকে মেসেজে লেখেন সুস্মিতা৷
রাহুল উত্তর দেন, “যদি তুমি কিছু বুঝতে না পারো, তাহলে তাঁকে বিদ্যুতের শক দাও।”
কথোপকথন চলতে থাকে৷ চ্যাটে সুস্মিতা জিজ্ঞাসা করেন, “বিদ্যুতের শক দেওয়ার জন্য তাঁকে কীভাবে বেঁধে রাখা যায়?”
রাহুল বলল, “টেপ দিয়ে।”
সুস্মিতা টেক্সটে লেখেন, “ও খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে।”
রাহুল উত্তর দেন, “তোমার যত ওষুধ আছে, সব ওকে দিয়ে দাও।”
সুস্মিতা মেসেজ করেন, “আমি ওর মুখ খুলতে পারছি না। আমি মুখে জল ঢালতে পারব, কিন্তু ওষুধ দিতে পারব না। তুমি এখানে এসো, হয়তো একসঙ্গে আমরা ওকে ওষুধ খাওয়াতে পারব।”
আরও পড়ুন : জামাই কি তাঁর শ্বশুর শাশুড়ির সম্পত্তি পেতে পারেন? উত্তরাধিকার হিসেবে আছে কোনও আইনি অধিকার? জানুন দরকারি কথা
অপরাধ স্বীকার :
পুলিশ জানিয়েছে, খুনকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে দেখানোর চেষ্টায় করণকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। খুনের পর, সুস্মিতা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে দুর্ঘটনার কথা জানাতে যান। পরিবারের বাকি সদস্যকে দ্রুত ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে করণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বিতর্কিত এই চ্যাটের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বৌদি-দেওরকে গ্রেফতার করা হয়৷ পরে করণের স্ত্রী সুস্মিতা তাঁর স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন৷ বলেন, দেওর রাহুলের সঙ্গে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, করওয়া চৌথের একদিন আগে করণ তাঁকে থাপ্পড় মেরেছিল এবং শারীরিক নির্যাতন করেছিল৷ সুস্মিতার অভিযোগ তাঁর কাছে প্রায়ই টাকা চাইতেন স্বামী করণ৷ করতেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন৷
“প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে, উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ময়নাতদন্তের বিস্তারিত রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করছি,” সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন দ্বারকার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অঙ্কিত সিং।