রেলের হাতে আসা তথ্য বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় ওড়িশার বালাসোরের কাছে বহংগাবাজার স্টেশনে রেল দুর্ঘটনা ঘটতে মোট ২৩ সেকেন্ড সময় লেগেছে৷ প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধে ৬.৫৫ মিনিটে বহংগাবাজার স্টেশনের কাছে পৌঁছয় চেন্নাইমুখী করমণ্ডল এক্সপ্রেস৷ ওই সময় ট্রেনেটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার৷ ওই সময়ই পাশের লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির পিছনে তীব্র গতিতে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের অন্তত ১৫টি কামরা৷
advertisement
আরও পড়ুন: মেন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে করমণ্ডল? কীভাবে দুর্ঘটনা, রেলের প্রাথমিক রিপোর্টে যা উঠে এল
রেলের রিপোর্ট বলছে, ঠিক ওই সময়ই উল্টো দিক থেকে ডাউন লাইন ধরে ছুটে আসে বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী ডাউন যশবন্তপুর হাওড়া এক্সপ্রেস৷ রেলের আরটিআইএস ডেটা বলছে, ঘড়ির কাঁটায় যখন সন্ধে ৬.৫৫ বেজে ২৮ সেকেন্ড, তখন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার৷ আর ৬.৫৫ বেজে ৪২ সেকেন্ডে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের গতি ধরা পড়েছে ঘণ্টায় ১২৬ কিলোমিটার৷ অর্থাৎ, দুটি ট্রেনই প্রায় সমান গতিতে বিপরীত দিকে ছুটছিল৷
আরও পড়ুন: জীবন-মরণের সীমানা ছাড়ায়ে… সারি সারি মৃতের স্তূপে ছিল একটা কবিতার খাতা আর চাপ চাপ রক্ত
সংঘর্ষের জেরে মালগাড়ির উপরে উঠে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন৷ ছড়িয়ে, ছিঁটিয়ে উল্টে পড়ে একের পর এক কামরা৷ ফলে থমকে ট্রেনের গতি৷ অন্যদিকে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের পিছনের দিকের কয়েকটি কামরা বেলাইন হওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরাগুলির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে লাইনচ্যুত হয়৷ রেলের তথ্য বলছে, ৬.৫৫ বেজে ৪২ সেকেন্ডে ১২৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে থাকা যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের গতি ৬টা ৫৫ বেজে ৫১ সেকেন্ড থেকে কমতে শুরু করে৷ রেল কর্তাদের অনুমান, করমণ্ডল মালগাড়িতে ধাক্কা মারার ২৩ সেকেন্ডের মাথায় বেলাইন হয় যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের পিছনের দিকের কামরাগুলি৷ যে কারণে ওই ট্রেনটির গতি কমতে শুরু করে৷ এর মিনিট খানেক পরে থমকে যায় হাওড়াগামী এই ট্রেনটিও৷
তবে এই দু্র্ঘটনা একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ কারণ মাত্র কয়েক মাস আগেই এই লাইনে হাই স্পিড ট্রেন চালানোর অনুমতি দিয়েছিল কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি৷ সেই কারণেই ওই অংশে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে ছুটছিল দুটি ট্রেন৷ রেল লাইনের কোনও ত্রুটির কারণেই আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস পাশের লুপ লাইনে গিয়ে মালগাড়িতে ধাক্কা মারল কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে৷
তবে রেলের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে সিগন্যাল, রেলের স্লিপার বা পয়েন্টের কোনও ত্রুটির দিকে আঙুল তোলা হয়নি৷ ফলে প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি নাকি চালকের কোনও ভুলে এমন ভয়াবহ বিপর্যয়, সেই প্রশ্ন উঠছেই৷