২০১৩ বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে ইতিমধ্যে কাঠি পড়েছে। বুধবার অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি নয়াদিল্লি থেকে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তর পূর্বের ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই ঘোষণা মোতাবেক আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ত্রিপুরা বিধানসভার ভোট গ্রহণ। ফলাফল ঘোষিত হবে আগামী ২ মার্চ। আর নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতা শুরু হয়েছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার থেকে শুরু করে ছোট বড় জনসভা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়েছে গোটা রাজ্যে। তবে গণতন্ত্রের এই ভোট উৎসবে নতুন ভোটাররা একটা বড়সড় ফ্যাক্টর হয়।
advertisement
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী যে কোনও ছেলেমেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হলেই ভোট প্রদানের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। আর তারাই নতুন ভোটার। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে তারা। তাই ভোটকে ঘিরে তাদের একটা আশা প্রত্যাশা থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে নিজ বিধানসভা কেন্দ্র বড়দোয়ালী এলাকার নতুন ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, সেন্ট্রাল জোনের চেয়ারম্যান রত্না দত্ত, ভারতীয় জনতা পার্টির বড়দোয়ালী মন্ডল সভাপতি সঞ্জয় সাহা, সদর আরবান সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য-সহ অন্য নেতৃত্ব।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এই সরকার বাস্তবিক অর্থে মানুষের সরকার। মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে কাজ করাই বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এই সরকার নারী কল্যাণে কাজ করতে বিশ্বাস করে। তাই চাকরি ক্ষেত্রে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন স্টল প্রদানে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজগুলিতে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পঠনপাঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এজন্য অনেক ক্যামেরা কেনা হয়েছে। এর পাশাপাশি শহর সংলগ্ন এলাকাতেও ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেয়েদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এছাড়া রাজ্যের সাতটি জেলায় সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত মহিলা থানা স্থাপন করা হয়েছে। থানাগুলিতে ২৪ ঘন্টা হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য মহিলাদের আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।"
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নতুন ভোটারদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীতে এই অংশের ভোটারদের উপর নির্ভর করছে রাজ্যের ভবিষ্যৎ। 'এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা' গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদেরও একটা বড় ভূমিকা থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এই সরকার চাইছে নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গঠন করা। আর এজন্য একটা সঠিক প্ল্যাটফর্ম দরকার। বর্তমান সরকারই নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলতে অন্যতম সঠিক প্ল্যাটফর্ম। আজকের যুবরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এরমধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আইএএস, কেউ আইপিএস বা অন্য পেশা বেছে নেবে। মনে রাখতে হবে সমাজের জন্য প্রত্যেকের কিছু করার রয়েছে। অন্যের ভালোর জন্য যেমন কাজ করতে হবে তেমনি দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে।"
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "রাজ্যে বর্তমানে একটি ডেন্টাল কলেজ হয়েছে। নতুন নতুন অনেক ইউনিভার্সিটি হয়েছে। আগামীতে আরও হবে। এখানে ফরেনসিক, ল ইউনির্ভাসিটি গড়ে উঠছে। ট্রিপল আইটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চেষ্টা করছেন যাতে দেশের মেধা বাইরে না যায়। আর রাজ্য সরকার চাইছে যাতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের বাইরে যেতে না হয়। রাজ্যে বসেই যাতে ছেলেমেয়েরা সব ধরনের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় সেই চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য সব ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং ক্রীড়া - এই চারটি ক্ষেত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আগামী প্রজন্ম যাতে সবক্ষেত্রে সুফল পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। কোভিডের সময়ও দেশের জনগণকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। যে কারণে এখন দুনিয়া ভারতবর্ষকে অনুসরণ করছে।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ভোট প্রদানের ক্ষেত্রেও ভেবেচিন্তে ভোট দেওয়া প্রয়োজন। এই প্রথম বার নতুন ভোটাররা ভোট প্রদান করবেন। তাই তাদের অমূল্য ভোট প্রদানের আগে চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার এমন একটা সরকার যেটা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে বিশ্বাসী। আগামীতে ত্রিপুরা মডেল উপহার দেওয়াই এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।"