নয়াদিল্লি: অবসরগ্রহণের ঠিক আগের দিন কারও দ্বারা বা কোনও কিছু দ্বারা ‘প্রভাবিত’ হয়ে রায়দানের প্রবণতা৷ বিচারব্যবস্থার ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই ‘দুর্নীতি’কে উদ্দেশ্য করে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট মন্তব্য এল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের কাছ থেকে৷ দু’টি মামলার রায়দান ঘিরে সমস্যা সামনে আসায় অবসরগ্রহণের মাত্র ১০ দিন আগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের একটি জেলা আদালতের বিচারককে৷ পরে তিনি তাঁর সাসপেনশনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন৷ এদিন সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার মন্তব্য করে, ‘‘আবেদনকারী অসরগ্রহণের ঠিক আগে হঠাৎ ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেন৷ এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা৷ আমি আর এর বিশদ ব্যাখ্যা দিতে চাই না৷’’
advertisement
মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার মুখ্য জেলা ও দায়রা বিচারক রাজারাম ভারতীয়ার রায় ঘিরেই শুরু হয়েছে এই বিতর্ক৷ তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর। কিন্তু তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় ১৯ নভেম্বর। সাসপেনশনকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।
আরও পড়ুন:বিরোধীদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ, তার মাঝেই লোকসভায় পাশ হয়ে গেল ‘G RAM G’ গ্রামীণ রোজগার বিল
জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের এক রাজনৈতিক নেতা—যিনি একটি স্টোন ক্রাশার ফার্মেরও মালিক—তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন পান্না জেলা কালেক্টর। বিচারক রাজারাম তাঁর অবসরের মুখে কালেক্টরের নির্দেশ খারিজ করে দেন। তার পরেই বিচারকের নির্দেশ নিয়ে চুলচেরা স্ক্রুটিনি হয় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে। হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয় তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিচারকের অবসরের ১১ দিন আগে। তবে ইতিমধ্যে, মধ্যপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬২ বছর করায় আরও ১ বছর বেড়ে যায় ওই বিচারকের চাকরি জীবন৷ তবে ওই রায়দানের সময় চাকরির মেয়াদ বাড়ার কথা তিনি জানতেন না৷
এই সাসপেনশনের বিরোধিতা করেই সুপ্রিম কোর্টে জান ওই বিচারক৷ বৃহস্পতিবার আদালতে তাঁর আইনজীবী বিপিন সাংঘি সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেলের সার্ভিস রেকর্ড ভাল৷ কোনও রায় যা নিয়ে উচ্চ আদালতে ফের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে, সেই রায়ের জন্য কোনও ব্যক্তিকে কেন সাসপেন্ড করা হবে?
প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে কোনও ভুল রায়দানের জন্য কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না৷ তাঁকে সাসপেন্ড করা যায় না৷ কিন্তু, যদি সেই রায় স্পষ্টতই অসৎ হয়, তাহলে?’’
প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘‘ওই দুই রায় দেওয়ার সময় ওই বিচারক জানতেন না যে তাঁর চাকরিজীবন আরও ১ বছর বেড়ে গেছে৷ এই অবসরের আগে এত অর্ডার পাস করা এখন যেন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷’’ এছাড়া, সাসপেনশন নিয়ে আগে হাইকোর্টে আবেদন না করে কেন সুপ্রিম কোর্টে এসেছেন তিনি, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন সূর্য কান্ত৷
