ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই জনজাতিদের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি। জনজাতিদের বিকাশে মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা শনিবার আরও একবার প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দিনটি ত্রিপুরার জন্য বাস্তবিক অর্থে একটি ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকলো। এদিনই দুপুরে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা ও তিপরামোথার প্রধান প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মার উপস্থিতিতে জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণ ইস্যুতে একটি ত্রিপাক্ষিক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার এবং তিপরামোথার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
advertisement
আরও পড়ুনঃ খুশির আবহ জামনগরে! ‘ঘর মোরে পরদেশিয়া’-র ‘ঘর মোরে পরদেশিয়া’-র তালে পা মেলালেন নীতা-ইশা
চুক্তি স্বাক্ষরকালে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, রাজ্যের জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মন্ত্রী শুক্লাচরন নোয়াতিয়া, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা, তিপরামোথা প্রেসিডেন্ট বিজয় কুমার রাঙ্খল, এডিসির চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মা, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা-সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব পীযুষ গোয়েল এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এদিন রাতে রাজ্যে ফিরে মহাকরণে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে বিকাশের দিশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলছেন যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন হবে না ততক্ষণ দেশ উন্নত হবে না। আজকের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি খুবই ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে জাতি জনজাতি সকল অংশের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে এক শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার কাজ একধাপ এগিয়ে গেল। কারণ শান্তি সম্প্রীতি না থাকলে উন্নয়ন হবে না। আগে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উগ্রবাদ ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যেও একটা সময় এনএলএফটি-সহ বিভিন্ন উগ্রবাদীদের অস্তিত্ব ছিল। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শান্তি ফিরেছে। সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন উগ্রবাদীরা। এখনও কিছু অংশ আত্মসমর্পন করে মূলস্রোতে ফিরে আসছেন। ২০১৯ সালে এনএলএফটি চুক্তি, ২০২০ সালে ব্রু রিয়াংদের সঙ্গে চুক্তি, ২০২১ সালে কার্বি চুক্তি, ২০২২ সালে আদিবাসী চুক্তি, ২০২৩ সালে আসাম অরুণাচল সীমান্ত বিবাদ সংক্রান্ত চুক্তি-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরমধ্যে আজ দিল্লিতে সম্পাদিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তিও উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেটা সকলে মিলে বাস্তবায়ন করব। যেকোন ধরণের সমস্যা থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে ত্রিপুরার জনজাতিদের ইতিহাস, ভূমির অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিচয়, সংস্কৃতি ও ভাষা সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সমাধান করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সম্মানজনকভাবে জনজাতিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বাস্তবায়নে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি যৌথ কার্যকরী টিম গঠনের কথাও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে চুক্তির অংশীদারদের যে কোনও ধরণের প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ কর্মসূচি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।’
দিল্লিতে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘ত্রিপুরার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে বিদ্রোহ মুক্ত, সহিংসতা মুক্ত ও বিরোধ-মুক্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বিকাশের রূপরেখা বাস্তবায়নে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তর পূর্বে ১০ হাজার মানুষ অস্ত্র ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। এতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বিকাশের রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের সদর্থক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের বিভিন্ন সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তিপরা মোথা প্রধান প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা। এরমধ্যে কিছুদিন আগে দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরণ অনশনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সে মোতাবেক গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বড়মুড়ার হাতাইকতরে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন প্রদ্যুৎ ও তার অনুগামীরা। আর সেদিনই দিল্লি থেকে জরুরি ফোন পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দুপুর বেলায় দিল্লি পাড়ি দেন তিপরা মথা প্রধান। এরপর শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার পর রাতেই দিল্লির উদ্দেশ্যে উড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার নেতৃত্বে একটি উচ্চপদস্থ টিম। অবশেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয় জনজাতি কল্যাণে ঐতিহাসিক ত্রিপাক্ষিক চুক্তি।