“আমি হতবাক ছিলাম। আমি এখনও স্তব্ধ। আজ আমি শুধু এইটুকুই বলতে পারি, কোনও নারীর বিচার এভাবে শেষ হয় কী করে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশ্বাস করতাম। আমি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলাম, এবং আমি ধীরে ধীরে আমার ট্রমা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম,” বলেন বিলকিস বানো।
বিলকিস বানো বলেন, “এই আসামীদের মুক্তি আমার কাছ থেকে আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখ এবং আমার ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস শুধু আমার একার নয়, প্রতিটি মহিলার যারা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করছেন,” বলেন বিলকিস বানো।
advertisement
আরও পড়ুন- "মহিলারা উত্তেজক পোশাক পরলে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা ভিত্তিহীন,": আদালত
“এত বড় এবং অন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে খোঁজও করেনি। আমি গুজরাত সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে এই ক্ষতি দূর করুন। আমাকে নির্ভয়ে এবং শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিন। দয়া করে নিশ্চিত করুন যেন আমার পরিবার এবং আমাকে নিরাপদে রাখা হয়,” বলেন তিনি।
বিলকিস বানো মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে খুন হতে দেখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে তাঁর ছোট্ট মেয়েও ছিল। আরও সাতজন আত্মীয়, যাদেরও খুন করা হয়েছে বলে জানান বিলকিস, তাঁদের ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে সেই সময় গণধর্ষণ করা হয়।
২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বইয়ে একটি বিশেষ সিবিআই আদালত ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানো গণধর্ষণ ও পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার অভিযোগে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। পরে বম্বে হাইকোর্ট তাদের দোষী সাব্যস্ত করে।
সোমবার দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের সময় ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে জড়িত দলগুলি এই ১১ জনের মুক্তির খবরে মিষ্টি বিতরণ করে এবং মালা দিয়ে স্বাগত জানায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় ‘নারী শক্তি’র প্রশংসা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধর্ষণের অভিযুক্তদের মুক্তির ঘটনায় ক্ষিপ্ত বিরোধী দলগুলি।
আরও পড়ুন- জোড়া চাকরি অনুব্রত তনয়া সুকন্যার! ফেসবুকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দুই কর্মসংস্থানের
গুজরাত সরকার এই ১১ জনের মুক্তির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ১৯৯২ সালের নীতি অনুযায়ী মুক্তির আবেদন বিবেচনা করেছে সরকার। কারণ ২০০৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সময় এই নীতিই কার্যকর ছিল।
রাজ্যের পরবর্তী নীতি (২০১৪) এবং কেন্দ্রের আরেকটি সাম্প্রতিক নীতি বলে যে এই ধরনের জঘন্য অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। “কিন্তু ১৯৯২ সালের নীতি, যা এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাতে তেমন কিছু ছিল না,” বলেন গুজরাতের স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ কুমার।