৩৪ বছরের ওই যুবক চিঠিতে তাঁর চার বছরের সন্তানের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘বাবু, যখন আমি তোমায় প্রথম বার দেখলাম, মনে হয়েছিল তোমার জন্য আমার জীবন দিয়ে দিতে পারি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজকে আমাকে তোমার জন্যই প্রাণ দিতে হচ্ছে৷ তোমার মুখটা কেমন, ছবি না দেখলে এখন আমার ঠিক মতো মনেও পড়ে না৷ সেই ছবিগুলিও তোমার এক বছর বয়সে তোলা৷ এক এক সময় বুকে মোচড় দেওয়া যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই আমার সেভাবে মনে পড়ে না৷ এখন তোমাকে ব্যবহার করেই আমাকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে৷ যাতে যত বেশি সম্ভব টাকা আমার থেকে নিংড়ে নেওয়া যায়৷ শুনলে হয়তো তুমি কষ্ট পাবে, কিন্তু এখন আমার মনে হয় তোমাকে পৃথিবীতে আনাই আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল৷’
advertisement
আরও পড়ুন: ‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইনের অপব্যবহার করছেন কিছু মহিলা!’ বেঙ্গালুরু কাণ্ডে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের
অতুল অভিযোগ করেছেন, আদালতে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৮০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর স্ত্রীর দাবি ছিল, সেই দাবির পরিমাণ বাড়িয়ে ২ লক্ষ করতে হবে৷ অতুল লিখেছেন, এটা লজ্জার যে এমন একটা সিস্টেমে আমরা বাস করছি যে একজন বাবার কাছে তাঁর সন্তানকে বোঝা মনে হয়৷ সন্তানের থেকে বিচ্ছিন্ন এমন অনেক বাবার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, যাঁরা একই কথা বলেন৷ অতুলের ভাই বিকাশ অভিযোগ করেছেন, একবার তাঁর সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার জন্য অতুলের থেকে ৩০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী৷
সন্তানের উদ্দেশে অতুল লিখেছেন, ‘যতদিন আমি জীবিত থাকব এবং আমার কাছে টাকা থাকবে, তোমাকে আমার থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে৷ তোমার বাবা, কাকু, দাদু সবাইকে টাকা চেয়ে হয়রান করা হবে৷ আমার বাবা, মা, ভাইকে আমি এ রকম অকারণ হয়রানির মুখে ঠেলে দিতে পারি না৷ এমন কি, তোমার জন্যও নয়৷ আমার বাবার জন্য আমি তোমার মতো একশো সন্তানকে ত্যাগ করতে পারি৷ আবার তোমার জন্যই আমি ১০০০ বার নিজের বলিদান দিতে পারি৷ কিন্তু কোনও কারণেই নিজের বাবার হয়রানির কারণ আমি হব না৷’
তাঁর সন্তান কোনওদিন বাবার মর্ম বুঝবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অতুল৷ তিনি লিখেছেন, ‘আমি জানি বাবার মূল্য কতটা৷ বাবাকে পাওয়াটা ভাগ্যের৷ তিনিই আমার গর্বের কারণ৷ বাবা-ছেলের সম্পর্ক শব্দে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, হয়তো কোনওদিন বলেও বোঝান অসম্ভব৷ কিন্তু এসব এখন বোঝান অর্থহীন৷ তুমি আমার সম্পর্কে জানবে না৷ যদি আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারতাম…৷’
ছেলের প্রতি অতুলের পরামর্শ, ‘এই সমাজকে বিশ্বাস করো না৷ এই সিস্টেমকে বিশ্বাস করো না৷ কারণ এরা তোমাকে নিংড়ে নেবে৷ যদি তোমার শরীরে আমার রক্ত থাকে, তাহলে তুমি বড় হবে, ভালবাসতে এবং লড়াই করতে শিখবে৷ সুন্দর সুন্দর জিনিস সৃষ্টি করবে এবং সব প্রতিবন্ধকতাকে ধ্বংস করতে শিখবে৷’
সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাট থেকে অতুল সুভাষ নামে ৩৪ বছরের ওই ইঞ্জিনিয়ারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ অতুলের অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী একের পর এক মিথ্যে মামলা করে তাঁর থেকে টাকা আদায় করছিলেন৷ অতুল এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে পণের জন্য অত্যাচার, খুন, অপ্রকৃতিস্থ যৌনাচারের মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা করেন অতুলের স্ত্রী৷ দিনের পর দিন তাঁকে বেঙ্গালুরু থেকে উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের আদালতে ছুটতে হয়েছে৷ এমন কি, সেই আদালতের বিচারকও ঘুষ না দেওয়ায় মামলা ঝুলিয়ে রেখে তাঁকে হয়রান করেছেন বলে অভিযোগ করে গিয়েছেন অতুল৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, আইনের অপব্যবহার করে এ দেশে পুরুষদের হত্যালীলা চলছে৷ অতুল লিখে গিয়েছেন, ‘বিচার পেলাম না৷’