লাগাতার বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করতে পারেনি বিপ্লব দেবের সরকার। বেকারত্ব বাড়ছে এই অভিযোগে ত্রিপুরায় প্রচার অবধি শুরু করে দিয়েছে তারা। তৃণমূল নেতারা একাধিকবার এই ইস্যুকে সামনে রেখে বারবার বিদ্ধ করছেন বিপ্লব দেব'কে। আগামী মঙ্গলবার ত্রিপুরায় রাজনৈতিক কর্মসূচি আছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানেও বেকারত্ব ইস্যুতে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। নাম না করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের পরিযায়ী বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি৷ বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, ‘‘আধা রুটির স্বপ্ন দেখানো, রাজনৈতিক পরিযায়ীদের উদ্দেশ্য ত্রিপুরার মানুষ জানেন। এ রাজ্যের পরিশ্রমী মানুষ সম্মানের সঙ্গে রোজগারের মাধ্যমে, আধা নয় আস্ত রুটির বন্দোবস্ত করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানেন ৷ রাজ্যে এখন সঠিক ব্যবস্থাপনায় রোজগারের বিভিন্ন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।"
advertisement
আরও পড়ুন- ঘূর্ণাবর্তে রেকর্ড বৃষ্টি, আজ আবহাওয়ার কী পূর্বাভাস ?
তৃণমূলের যুক্তি, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার ২০১৮ সালে ১০,৩২৩ চাকরি আটকে থাকা শিক্ষকদের জন্য একটি 'স্থায়ী সমাধান' আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু মাত্র দু'বছর পরে, কোভিড -১৯ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, ২০২০ সালের মার্চ মাসে - সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেগুলি বাতিল করা হয়েছিল। মোট ১০,৩২৩ জন স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং অস্নাতক শিক্ষককে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায় ত্রিপুরা সরকারি স্কুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এই বিষয়ে কোর্টে মামলা দায়ের হয় ও কোর্ট এই নিয়োগকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। এর পরে, ২০১৭ সালে, রাজ্য সরকার একটি বিশেষ আবেদন করেছিল, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের পরে শিক্ষকদের অবসর নেওয়ার কথা ছিল, এবং তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে, সুপ্রিম কোর্ট তাদের ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এককালীন চূড়ান্ত মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় - যার পরে শিক্ষকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিপ্লব দেবের সরকার, যদিও তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল - ৩ বছর পরেও সেটি পূরণ করেনি।
বিপ্লব দেবের অবশ্য দাবি, বর্তমানে টাকার বিনিময়ে আর চাকরির টোকেন নয়, এখন স্বচ্ছ নিয়ম নীতির মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনৈতিক রং ছাড়াই চাকরির সমান সুযোগ পাচ্ছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। এদিকে, সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে আরও ৫,৪৩৭ জন শিক্ষকের চাকরি ঝুলে আছে। ত্রিপুরায় গত ১৫ বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত এই শিক্ষকরা আমলাতান্ত্রিক সমস্যা এবং সরকারের ত্রুটিপূর্ণ নীতির কারণে বেকারত্বের মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা এই বিষয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, যেখানে বিচারকরা সরকারকে তাদের পরিষেবা নিয়মিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সরকারি বেতনস্কেলের ভিত্তিতে তাদের নিয়মিত বেতন দিতে বলেছিলেন। তবে রাজ্য সরকার তাদের নিয়মিত করতে অনিচ্ছুক কারণ তারা শিক্ষকদের যোগ্যতা পরীক্ষা পাশ করেনি।
আবীর ঘোষাল