পার্থ চট্টোপাধ্যায়: সুব্রতদাকে নিয়ে আজকে কিছু বলতে হবে আর তাঁর সিট ফাঁকা ভাবা যায় না। কোনওদিন ভাবিনি রাজনীতি করব। নাকতলায় পাড়ায় আড্ডা দিচ্ছি। শোভনদেবদা টাক্সি থেকে নেমে এসে বলল ছাত্র পরিষদ করবি। একডালিয়ায় জীবনদার রেশন দোকানএর ওপর থাকে তখন৷ আমার দুটো জিনিস চোখের সামনে ভাসে প্রিয়দা সুব্রত দা দু'জনে বসুশ্রী সিনেমায় আসতেন আড্ডা দিতে মন্টু দার ওখানে। বসন্ত কেবিন থেকে খাবার আসত। আন্দোলন করতে গিয়ে মারও খেয়েছি। কল্যাণী সীমান্ত স্টেশনে গিয়েছিলাম। সেখানেও গন্ডোগোল। মানসের বাড়ি আক্রান্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুব্রত দা আমায় নিয়ে গিয়েছিল। প্রিয়দা-সুব্রতদা কখন যে কি করবে কেউ জানত না। কত কথা মনে পড়ছে। জীবনের প্রতিপদক্ষেপে ছাত্র আন্দোলনে সুব্রত দার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। যা বলত তাই শুনতাম। অনেক কথা হয়ত সুব্রত দাকে বলতে পারিনি। বৌদিকে বলেছি। এমন বৌদি পাওয়া দুস্কর। ঘাটাল যাওয়ার কথা ছিল। সুব্রত দা শুধু রাজনীতির গুরু ছিলেন না। বাড়ির বড়দা ছিলেন। মা মারা গেল। বাড়িতে এল। কতসময় বসে থাকল। কথা বলল। তখনও কিন জানি চার মাসের মধ্যে তুমিও চলে যাবে। আমার মার সঙ্গে বৌদির খুব ভাব ছিল। সুব্রত দা সে সময় স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার পর বহু নকশালের জেল মুক্তি ঘটিয়েছে। আমায় বলত মমতা গরীবের মেয়ে ওকে উঠতে দে। সংগ্রামী নেতা না থাকলে সংগ্রামী নেত্রী তৈরি হয় না। সংগ্রাম তৈরি হয় না। আন্দোলন তৈরি হয় না। বৌদি ভালো থাকুক।
advertisement
ফিরহাদ হাকিম: বিরোধী রাজনীতি করতে এসে সুব্রত দা-র ঘর চিনেছি। সুব্রত দা-কে দেখে আমার হিরো মনে হত। আমি উত্তমকুমারকে দেখিনি৷ সুব্রত দা-কে আমার উত্তমকুমার মনে হত। প্রথমে কাছে যাওয়ার সাহস হত না। কতবার বিমানবন্দরে দেখেছি। দেখতাম ভাবতাম হিরো আসছে। কাউন্সিলর হয়ে আমি আর অরুপ সুব্রত দা-কে পেয়েছি। উনি মেয়র ছিলেন। সুব্রত দা-র সাথে কাজ করার সাহস পেয়েছি। ওঁর সঙ্গে কথা বলেও মনে হত না, কথা শেষ হয়েছে। আজ বিশ্বাস হচ্ছে না, সুব্রত দা বিধানসভায় নেই।
মানস ভুঁইয়া: সুব্রত মুখোপাধ্যায় শুধু একটা নাম নয়। একটা সময়। নকশাল আন্দোলনের উত্তাল সময়ে মেডিকেল কলেজে কী সব কাণ্ড ঘটেছে। মহাজাতি সদনে যেতাম মাঝেমধ্যে। দেখতাম প্রিয়- সুব্রত চা বানাচ্ছে। বললাম ছাত্র পরিষদ করব। সুব্রতদা বলল সত্যি করবি? ৮০ ভাগ জুড়ে আমার ভিতর সুব্রতদা রয়েছে। বাবা মারা গেল আমার। খবর দিতে পারিনি। কোথা থেকে খবর পেয়ে বাড়িতে বৌদিকে নিয়ে হাজির। মা মারা যাওায়র সময়েও তাই। বুকে আগলে রাখত। জড়িয়ে রাখত। রাজনীতির উর্ধ্বে সম্পর্ক ছিল। দাদা- ভাই। বিরোধী দলের ভূমিকা কী হবে, তা সুব্রত দা শিখিয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত দা-কে বাদ দিয়ে কোনও রিসার্চ আলোচনা ইতিহাস কোনও কিছুই লেখা যাবে না। স্পিকার মহোদয়কে বলব স্পেশাল অনুষ্ঠান বা কিছু করা যায় কি না দেখবেন।
আরও পড়ুন: অনুব্রত মণ্ডলের নিশানায় এবার রূপা গঙ্গোপাধ্যায়! BJP নেত্রীর উপর বেজায় ক্ষুব্ধ 'কেষ্ট দা'
মিহির গোস্বামী: প্রিয়-সুব্রত দা'র হাত ধরে আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মী যোগ দিয়েছিল ছাত্র রাজনীতিতে। রাজনীতির ময়দানে কাজ করতে করতে উনি আমার পরিবারের লোক হয়ে ছিলেন। কলকাতায় এলে সুব্রত দার বাড়িতে দেখা করব না এটা আমার কাছে পাপবোধ ছিল। প্রিয় দা সামনে থাকলেও শক্তি সঞ্চালক ছিলেন সুব্রত দা। সুব্রত দা আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা ছিল।
বিধায়ক হয়ে শপথ নিয়ে প্রণাম করলাম। রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী হয়েও উত্তরবঙ্গে অনুন্নয়নের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র পরিষদের আন্দোলনে সম্মতি দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: 'বিরোধী দলনেতার পদ চলে যাচ্ছে', শুভেন্দুর 'দলবদল' সম্ভাবনা? বিস্ফোরক দাবি সৌমেনের!
শুভেন্দু অধিকারী: বিদেহী আত্মাকে প্রণাম জানাই৷ সকলের প্রতি সমবেদনা জানাই৷ আমি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। আমার ও আমার পরিবারের আত্মিক সম্পর্ক ছিল তাঁর সঙ্গে। ইন্দিরা গান্ধির সভায় আমি তাঁকে প্রথম দেখি। আমাদের বাড়িতে বহুবার এসেছেন। আমরা পরিবারের মানুষকে হারালাম। রাজনৈতিক অংশের বাইরেও সম্পর্ক ছিল। কোনও দিন তার হেরফের হয়নি৷ আমাকে সন্তান স্নেহে দেখতেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মার্গ দর্শন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। যতদিন রাজনীতি থাকবে এই বাংলায় সুব্রত দা প্রাসঙ্গিক থাকবেন। আমার শেষ স্মৃতি আমাকে শপথ বাক্য পাঠ করানো। আমার জন্যে অপেক্ষা করেছিলেন। হাসপাতালে খোঁজ নিতাম। তাঁর চলে যাওয়া একটা বড় বিপর্যয়।