পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়, এরপর তার শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়, তারপর মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হয় এবং শেষে তার দেহ গর্তে পুঁতে ফেলা হয়। এই নির্মম ঘটনায় গোটা এলাকা হতবাক হয়ে গেছে।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ১২ বছর বয়সী কিশোরী প্রথমে শিশুটিকে বাতাবি লেবু খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে সঙ্গে নিয়ে যায়। এরপর সে শিশুটির গলা টিপে ধরে, পরে বড় পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে। হত্যার পর শিশুটির দেহ একটি নির্মাণাধীন জায়গার গর্তে পুঁতে ফেলে এবং ওপর থেকে মাটি ও পাথর চাপা দিয়ে দেয়।
advertisement
আরও পড়ুন: লোহগড় দুর্গে ২১ বছর বয়সী আইন শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার, আত্মহত্যার সন্দেহ পুলিশের
পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত কিশোরীকে আটক করেছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিন্তু এত অল্প বয়সে এমন ভয়ংকর অপরাধ করার কারণ কী? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবাইয়ের মনে।
নিহত শিশুটির পরিবার মধ্যপ্রদেশে ললিতপুর জেলার মাহুলেন গ্রামের বাসিন্দা। ২৭ বছর বয়সী রামকুমার বংশকার ও তার স্ত্রী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গোয়ালিয়রে এসেছিলেন মাত্র দুই মাসের জন্য। তাদের চার সন্তান রয়েছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিল ৪ বছর বয়সী দেবরাজ বংশকার।
মঙ্গলবার রামকুমার ও তার স্ত্রী কাজের জন্য বেরিয়ে যান এবং দেবরাজ তার ভাইবোনদের সঙ্গে খেলছিল। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সে স্বাভাবিকভাবেই খেলছিল, তারপর হঠাৎই সে নিখোঁজ হয়ে যায়।
দেবরাজের মা তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজির পরেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে তিনি স্বামীকে খবর দেন। এরপর রামকুমার ও তার সহকর্মীরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন, কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।
পুলিশ বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে তারা দেখতে পায়, দেবরাজকে ১২ বছরের কিশোরীর সঙ্গে যেতে দেখা যাচ্ছে।
প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত কিশোরী পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সে জানায়, সে শিশুটিকে কিছুক্ষণ পরই ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু নিহত শিশুটির ছোট বোন বারবার পুলিশের কাছে বলছিল যে তার ভাইকে ওই মেয়েটি ফেরত দেয়নি।
এতেই পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। এরপর দ্বিতীয়বার জেরা করা হলে অভিযুক্ত মেয়েটি ভেঙে পড়ে এবং স্বীকার করে যে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তার দেখানো জায়গা থেকেই পুলিশ শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এখনও পর্যন্ত পুলিশ স্পষ্টভাবে জানতে পারেনি, কেন মাত্র ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটালো। এটি কোনো রাগের প্রতিশোধ ছিল নাকি তার মনে অন্য কোনো অন্ধকার ভাবনা কাজ করছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এই ঘটনাটি সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরছে—একটা শিশু কীভাবে এত বড় অপরাধ করতে পারে? তার মানসিক অবস্থা কী ছিল? তাকে কি কোনোভাবে প্ররোচিত করা হয়েছিল? নাকি এটি নিছক তার বিকৃত মানসিকতার ফল?
এই ঘটনার পর পুরো এলাকা শোক ও আতঙ্কে রয়েছে, এবং সবাই জানতে চাইছে—একটি ১২ বছরের কিশোরী কেন এমন ভয়ংকর কাজ করল?