আরও পড়ুন: লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নিয়ে পা খোয়ান মন্মথনাথ ষাঁড়েশ্বরী, ইন্দিরা দিয়েছিলেন তাম্র ফলক
১৮ টি পাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। আর সেই গ্রামের মাঝেই গড়ে উঠেছে মুকুটেশ্বর শিব মন্দির। কালের নিয়মে গ্রামের আয়তন কমেছে। তবে শিবমন্দিরটি আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত গ্রামগুলির তালিকায় পড়ে এই মসড্ডা গ্রাম। কীভাবে এই মুকুটেশ্বর শিব মন্দির তৈরি হল তা নিয়ে নানান রোমাঞ্চকর কাহিনী প্রচলিত আছে। বড়ঞা থানা থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে বড় বড় গাছের ছায়ায় ঘেরা ওই মন্দির চত্বর। ঠিক কবে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বর্তমান সেবায়েতদের কাছে নেই। এমনকি প্রবীণদেরও সেই উত্তর অজানা। কথিত আছে প্রায় দুশো বছর আগে বাঘডাঙার রাজা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুন: বিশ্বমানের হতে চলেছে নদিয়ার এই চারটি রেল স্টেশন, দেখে নিন কী কী সুবিধা থাকবে
মন্দিরের সেবায়েতরা তাঁদের পূর্বপুরুষের মুখে যে গল্প শুনেছেন তা-ই বছরের পর বছর ধরে লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে এসেছে। শোনা যায় আগে মসড্ডা গ্রামের মাঝামাঝি জায়গা ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। মুকুট ঘোষ নামে গ্রামের এক গো পালক নিয়মিত তার গোয়ালের সমস্ত গরুই ওই জঙ্গলে চড়াতে নিয়ে যেতেন। একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, গরু পালের মধ্যে থাকা একটি গাই বাড়িতে এসে দুধ দিচ্ছে না। তাকে জঙ্গলের ধারে চড়াতে নিয়ে গেলে বাকি গরুদের থেকে আলাদা হয়ে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে যায়। তারপর আবার ফিরে আসে ঠিকই, কিন্তু বাড়ি এসে আর দুধ দেয় না। বেশ কিছুদিন এমন চলে। শেষে মুকুট ঘোষের কাছ থেকে সবকিছু শুনে গ্রামের বাসিন্দারা ঠিক করেন, তাঁরা ওই গরুটির পিছু নিয়ে সকলে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গ্রামের বাসিন্দারা গরুটির পিছু নেন। গভীর জঙ্গলে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজে থেকেই দুধ দিচ্ছে ওই গরুটি। এতো দুধ দিয়েছে যে সেই এলাকার মাটি ভিজে গেছে।
এদিকে মুকুট ঘোষ বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে পরেরদিন একা একা জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে তার গাইয়ের দুধে ভিজে ওঠা জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করেন। কথিত আছে, সেখানে তিন ফুট গভীর গর্ত খোঁড়ার পর তিনি দেখতে পান একটি শিবলিঙ্গ উঠে আসছে। ওই রাতেই মুকুট স্বপ্নদেশ পান, ওই স্থানে একটি মন্দির নির্মাণ করতে হবে এবং মন্দিরের নাম হবে মকুটেশ্বর। কিন্তু মন্দির নির্মাণ করবে কে? এতো টাকা কোথা থেকে আসবে। তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে মুকুটের। এমন সময় কান্দি বাগডাঙা রাজপরিবারের এক সদস্যও স্বপ্নাদেশ পান মন্দির গড়ার জন্য। সেই মতো তিনি তোড়জোড় শুরু করেন। অবশেষে ২০ ফুট চওড়া ও ২২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৩২ ইঞ্চি ইটের গাঁথনির দেওয়াল দিয়ে মন্দির নির্মাণ হয়। মকুটেশ্বর মন্দিরের পুজো শেষে প্রসাদ বাগডাঙা রাজপরিবারে নিয়ে যেতে হত সেবায়েতদের। কথিত আছে এই মন্দিরের শিবের প্রসাদ খেলে নাকি শরীরের সমস্ত রোগ সেরে যায়। বর্তমানে শুধু সারা বছর নয় শ্রাবণ মাসের সোমবার সহ বিভিন্ন বিশেষ দিনে শিব ভক্তরা আসেন মন্দিরে পুজো দিতে।
কৌশিক অধিকারী