ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসবে গানের আসরে ছিল মনের মানুষের খোঁজ। “মানুষ খেলা করে বিরজার পাড়ে”, গাইলেন মাকি কাজুমি। যেন ভাবের ঘরে সন্ধান নিতে বললেন মনের মানুষের। রাত গভীর হতে দোতারার সুর মূর্ছনায় রাতের আকাশে তারা ফোটালেন বিশিষ্ট শিল্পী মনসুর ফকির। তার কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন, এখনও সেই বৃন্দাবনে বাঁশি বাজে রে। ঐ বাঁশি শুনে বনে বনে ময়ূর নাচে রে।
advertisement
গান শুনতে শুনতে, সুরে ভাসতে ভাসতে আম বাগানে ভিড় করেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা-সহ অন্যান্য জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। মুর্শিদাবাদ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী গঙ্গা নদী, পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার আম বিখ্যাত। তাই মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যে এবং বাংলাদেশ থেকেও এসেছিল বহু শিল্পীরা। এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলা মিলে গেল ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসবে।আমবাগানে জমে ওঠে এই উৎসব।
শুধু আমবাগানে নয় প্রানের শহর মুর্শিদাবাদ শহরে রাস্তাজুড়ে চলে প্রাণের উৎসবের মহড়া। সিংঘি হাইস্কুলের সামনে থেকে প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে শুরু হয় ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসব। প্রভাত ফেরীতে শামিল হন জেলার কচি কাঁচা থেকে বিশিষ্টজনেরা। মানুষের সাড়া পেয়ে খুশি উদ্যোক্তারাও। মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক পার্কের আমবাগানে দুইদিন ধরে চলে এই উৎসব। বর্তমানে এক অশান্ত সময়ে মানুষের মিলনমেলা হয়ে ওঠে ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসব, সাধারণ মানুষের জন সমাগমে বেশ উৎসাহিত ছিল উদ্যোক্তা থেকে শিল্পীরাও।
আরও পড়ুন: 'কারা যেন এসে মৃতদেহ ফেলে গেল, তাই পাহারা দিচ্ছি', সাগরদিঘিতে মারাত্মক রক্তাক্ত রহস্য!
উদ্যোক্তাদের কথায়, মুর্শিদাবাদের আলকাপ, বাউল ফকিরি গান, মালদার গম্ভীরায় জাতপাতের বেড়া নেই। লোক সংস্কৃতির উঠোনে সব ধর্মের মানুষজন একসঙ্গে পাত পেড়ে খান। একসঙ্গে ঘুমোন। আসরে একসঙ্গে গান ধরেন -‘ শুনহে মানুষ ভাই —-’ এঁদের একটাই পরিচয়, তাঁরা শিল্পী। এই ভাবনার অনুসারী হয়েই শুরু হয়েছে ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসব। ফলে অশান্ত সময়ে ভাগীরথী বাউল ফকির উৎসব আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছে মানুষের মিলনমেলা। দুইদিন ব্যাপি সারাদিনই চলে শিল্পীদের নিজেদের মধ্যেই আলাপচারিতা। আর সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় শুধুই গান আর গান। কোনওরকম সংকীর্ণতার বেড়া ছাড়াই । বাউল আলকাপ শুনতে ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষ ।
কৌশিক অধিকারী