বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজা কৃষ্ণনাথ দিবস উদযাপিত হয়। কৃষ্ণনাথ দিবস উদযাপন করা হয় কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিতর্ক সভার মধ্যে দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হল।
কলেজ ভবনের পাশাপাশি বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে আয়োজন করা হয় কৃষ্ণনাথ দিবস। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে কৃষ্ণনাথ কলেজের কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরষ্কৃত করা হয়। এটি রাজা কৃষ্ণনাথের ২০০ বছরের জন্মদিন ছিল।
advertisement
আরও পড়ুন: আবাসের ঘর কারা পেল? প্রকৃত তথ্য জানতে মালদহে কেন্দ্রের দল
রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন কলেজ বহরমপুরের এই কৃষ্ণনাথ কলেজ। ১৮৫৩ সালে এটি তৈরি হয় মাত্র ২২ বছরের এক যুবকের আগ্রহে। যদিও তিনি নিজে সেই কলেজ দেখে যেতে পারেননি। রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার, ডিরোজিওদের ভাবশিষ্য ছিলেন কাশিমবাজারের মহারাজা কৃষ্ণনাথ রায়। তৎকালীন গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে তিনি মুক্তচিন্তার চর্চা করতেন। চাইতেন দেশে মুক্তমনে জ্ঞানচর্চা হোক। ধনী পরিবারের সদস্য হয়েও নিজের সব সম্পত্তি এই কলেজ গড়ার জন্য দান করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো কৃষ্ণনাথ রায় যেদিন তার সমস্ত সম্পত্তি দান করেছিলেন তার পরের দিনই তিনি প্রয়াত হন (৩১ অক্টোবর, ১৮৪৪)! স্বামীর ইচ্ছাপূরণে উদ্যোগী হন তাঁর স্ত্রী রানি স্বর্ণময়ী। তাঁর প্রচেষ্টাতেই তৈরি হয় কলেজ।১৮৫৩ সালের ১ নভেম্বর বহরমপুর কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়। ১৯০৩ সালে বহরমপুর কলেজের নাম বদলে রাখা হয় কৃষ্ণনাথ কলেজ।
ভাগীরথী নদীর তীরে রানি স্বর্ণময়ীর দান করা ২১ বিঘা জমিজুড়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আদলে গড়া হয় এই কলেজ। ঐতিহ্যের এই কলেজ ধীরে ধীরে আরও সমৃদ্ধশালী হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই কলেজ ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের গোপন ডেরা। এখানকারই ছাত্র ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেন, নলিনী বাগচি, নিরঞ্জন সেনদের মত বাঘা বাঘা সব বিজ্ঞানীরা। প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকও কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। অবিভক্ত বাংলায় এই কলেজে খুব উচ্চমানের বিতর্ক প্রতিযোগিতা হত। পরপর দু’বছর সেই বিতর্কে একজনই জয়ী হ’ন। তিনি ছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কৌশিক অধিকারী