এমনিতেই ঋতু পরিবর্তনের কারণে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় মানুষের শরীরে। শীত পড়তে না পড়তেই ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভোগেন অনেকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দূষণ দোসর। গত কয়েক বছরে এর প্রভাবে মারাত্মক অ্যালার্জিতে ভুগছেন অনেকে। কলকাতাও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এ ভাবে ক্রমাগত সংক্রমণ হতে থাকলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। ফুসফুস-সহ সামগ্রিক ভাবে শরীর সুস্থ রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ তো প্রয়োজনীয় বটেই। তবে রোগ আক্রমণ করার আগে কিছু ঘরোয়া টোটকা রক্ষা করতে পারে স্বাস্থ্য। এ সব আয়ুর্বেদিক উপাদানের কথা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। সেই চির পরিচিত উপাদানগুলিই অনেকাংশে রক্ষা করতে পারে এই শীত আর দূষণের ভয়াল যুগলবন্দি থেকে।
advertisement
আরও পড়ুন - Skin Care Tips: কোরিয়ান গ্লাস স্কিন, ত্বকে ঠিকরে পড়ে আলো! রইল সহজ সরল টিপস
দেখে নেওয়া যাক এক নজরে—
তুলসি
দূষণ প্রতিরোধী ক্ষমতার জন্য দারুন ভাবে পরিচিত গুল্ম উদ্ভিদ তুলসি। এর গাছপালা দূষণ শোষণ করতে সাহায্য করে করে বলে মনে করা হয়। অনেকেই তাই বাড়িতে তুলসি চারা রোপণ করে থাকেন। এটা জরুরিও। দীর্ঘদিন ধরেই সর্দি কাশির ক্ষেত্রে তুলসি পাতা খাওয়ানোর চল রয়েছে এ দেশে। আয়ুর্বেদ মতে ১০ থেকে ১৪ মিলিলিটার তুলসি পাতার রস পান করলে শ্বাসতন্ত্রের দূষকগুলি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়।
নিম
নিমকে সব সময়ই পরিশোধক হিসেবে দেখা হয়। যাবতীয় দূষক পদার্থ শোষণ করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে নিম। পাতা থেকে ডাল- নিম গাছের সব অংশই মানুষ ব্যবহার করেছে শরীর পরিষ্কার করার কাছে। নিম পাতার নানা পদ বাঙালির পাতে দীর্ঘদিন ধরেই সমাদর পাচ্ছে। আয়ুর্বেদ বলছে, সপ্তাহে অন্তত দু’বার তিন থেকে চারটি নিম পাতা খেলে রক্ত ও লিম্ফ্যাটিক টিস্যুকে বিশুদ্ধ রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া নিম পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে ত্বক ও চুল পরিষ্কার করলে ত্বক ও মিউকোসাল মেমব্রেনে আটকে থাকা দূষিত পদার্থও পরিষ্কার হয়ে যায়।
পিপ্পলি
বাঙালি একে পিপুল বলেও জানে। ফুসফুস শুদ্ধ করার জন্য এটি আরেকটি দারুন কার্যকরী ভেষজ। শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ সুগম করতে সাহায্য করে পিপ্পলি। পাশাপাশি এর আয়ুবর্ধক উপাদান ফুসফুসের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কার্যকরী। পিপ্পলির গুঁড়ো আদা, কাঁচা হলুদ ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তারপর ঈষদুষ্ণ গরম জল পান করতে হবে। ফুসফুস পরিষ্কার করতে এই টোটকার জুড়ি মেলা ভার। তবে পর পর সাত দিনের বেশি এটি সেবন করা যাবে না।
আদুসা
আয়ুর্বেদের এই বিশেষ গাছটি বাঙালির কাছে বাসক নামে পরিচিত। ইংরিজিতে একে মালাবার নাট বা বাদামও বলা হয়। বাঙালি বাসক পাতার রস খেতে অভ্যস্ত, দীর্ঘদিন ধরেই সর্দি কাশিতে তা উপকারী বলে প্রমাণিত। কিন্তু বাসক বা আদুসা ফলের গুঁড়োও উপকারী। এই গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যেমন হুপিং কাশি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানিতে স্বস্তি মেলে বলে মনে করা হয়। জমে থাকা কফ তুলে ফেলতেই সাহায্য করে।
কিছু উপকারী তথ্য—
গত দু’বছরে করোনা অতিমারীর দাপটে সারা বিশ্বের মানুষ উষ্ণ জলের বাষ্প নেওয়ার বিষয়ে জেনেছেন। আসলে এই বাষ্প গ্রহণের বিষয়টি ফুসফুসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। ফুসফুস পরিষ্কার করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি এটি। কারণ বাষ্প গ্রহণ করলে শ্বাস নেওয়া বায়ু পথ খুলে যায় এবং ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা নিষ্কাশন করতে সহায়তা করে।
আয়ুর্বেদের আরেকটি ভাল পথ হল প্রাণায়াম অনুশীলন করা। এটি শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বুকের ভিতর জমে থাকা শ্লেষ্মা দূর করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে। প্রাণায়াম অনুশীলনের পর প্রতিটি নাসারন্ধ্রে এক ফোঁটা তিলের তেল দিলে ব্যায়ামের উপকারিতা দ্বিগুণ হয়। নিয়মিত চ্যবনপ্রাশ সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে।
যা এড়িয়ে যেতে হবে—
বাড়ির বাইরের খাবার যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভাল। রেস্তোরাঁ খাবার, জাঙ্ক ফুড, প্যাকেট জাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে বাড়ির খাবারে বেশি করে আদা, হলুদ, জোয়ান, গোল মরিচের মতো ভেষজ দ্রব্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফুসফুস পরিশুদ্ধ রাখতে ত্রিফলা, হলুদ, মুলেঠি, গুড় খাওয়া ভাল।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)