স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ দাসের কথায়, “১৮৫০-এর দিকে দু’জন ইংরেজ বণিক মিস্টার লবার্ট আর মিস্টার ওয়াটসন এই কুঠি বানান। তার পরই শুরু হয় বাধ্যতামূলক নীলচাষের যুগ।” আজ সেই কুঠি নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। নীলচাষের শুরুটা কৃষকদের জন্য লাভজনক মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে তা পরিণত হয় এক নির্মম শোষণে। জমিদারদের ইশারায় গরিব কৃষকদের বাধ্য করা হত নীল চাষে। তাঁদের আদেশের উত্তরে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেই নেমে আসত অকথ্য অত্যাচার।গ্রামের মানুষের মুখে এখনও গল্প শোনা যায়। রাতে কুঠির দিক থেকে চাবুকের শব্দ, চাষিদের আটক রেখে নীলের রঙ বের না হওয়া পর্যন্ত কাজ করানো, আর ঋণের নামে ফাঁস তৈরি করে রাখা ছিল অত্যাচারের চরম পর্যায় । এই অন্যায়ের ফলেই সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহের ঢেউ, ইতিহাসের পাতায় যার নাম নীল বিদ্রোহ, সময়কাল ছিল ১৮৫৯-৬০।
advertisement
কৃষকেরা একসুরে বলে উঠেছিল “নীল আর নয়! ধান চাই, বাঁচার অধিকার চাই!” নীল চাষের জেরে পুড়েছিল বহু কুঠি, ভেঙে পড়েছিল ব্রিটিশ জমিদারি ব্যবস্থার অহঙ্কার। সেই বিদ্রোহের আগুন ছত্রগঞ্জেও পৌঁছেছিল বলে এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা। সময় বদলেছে,নীলচাষ নেই, জমিদারিও নেই। কিন্তু ইতিহাসের দালানটির অবস্থা বদলায়নি। অযত্নে-অবহেলায় ধীরে ধীরে জঙ্গলে মিলিয়ে যাচ্ছে এই নীলকুঠি। গাছপালার শিকড় ভেদ করে উঠেছে পুরনো ইটের গায়ে।
আরও পড়ুন : রাত পোহালেই অঘ্রাণের পূর্ণিমা! করলা, উচ্ছে-সহ এই ৪ সবজি ভুলেও খাবেন না! অভাব, অসুখ ও অমঙ্গলে ছারখার সংসার!
ভাঙা ছাদে দিনের আলো চকচক করে পড়ে, আর ভেতরটা একেবারে খালি।তবুও দাঁড়িয়ে আছে নীরবে অভিযোগহীনভাবে।একসময়ের নির্মমতার, সংগ্রামের ও বিদ্রোহের সাক্ষী হয়ে স্থানীয়দের আশা, একদিন হয়ত পুনরুদ্ধার হবে স্থানটি। ইতিহাসকে চিনবে নতুন প্রজন্ম, কারণ এই নীলকুঠি শুধু একটি নির্মাণ নয়, বাংলার কৃষক বিদ্রোহের রক্তমাখা দলিল, এক অধ্যায়ের নিস্তব্ধ প্রহরী।