গ্রামে রাস্তা তৈরি করতে মাটি আনতে গিয়ে প্রথম এলাকার মানুষ ওই স্তূপের সন্ধান পান৷ প্রায় ৫০ বছর আগে মাটি খনন করতেই ওই বৌদ্ধস্তূপের দেখা মেলে। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল বৌদ্ধমূর্তিও। পূর্ব বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার বুদবুদ থানার অধীনে ভরতপুর গ্রামে খোঁজ মেলে ওই বৌদ্ধস্তূপের। এর পরে ১৯৭১-৭২ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই এলাকায় খননকার্য শুরু হয়। সেই সময় খননকার্যে একটি বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
advertisement
সেই সময় প্রত্নতাত্ত্ববিদরা প্রাথমিক পর্যায়ে দাবি করেন, ওই বৌদ্ধস্তূপে ‘নবম-দশম শতকের একাধিক স্থাপত্যের নিদর্শন মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে একটি ঘর বা কক্ষ। ওই কক্ষের বাইরে একটি প্রাচীরের নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে।” পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এটি হয়তো উপাসনাস্থল এবং বিদ্যাচর্চা কেন্দ্র ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে, এমন বিহারে উপাসনা, পুজো-অর্চনা এবং অধ্যয়ন-অধ্যাপনা করা হত। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ফের সেখানে খনন কার্য শুরু হয় ২০২৩ সালে।
বৌদ্ধস্তূপ সংলগ্ন জমি খনন করতেই কয়েকটি ঘরের ইটের দেওয়ালের হদিশ পাওয়া যায়। মূল স্তুপের মাটির নীচে ইটের গাঁথনি বেরিয়ে আসে। অনুমান করা হয়, এটি দামোদরের বিধ্বংসী বন্যায় বিনষ্ট কোনও প্রাগৈতিহাসিক সৌধের অংশ। ইট দিয়ে এটি পরে নির্মাণ করা হয়। এটি উড়িষ্যার রত্নগিরি স্তূপের অনুরূপে তৈরি। মাটির তলা থেকে বেরিয়ে আসে ইটের গাঁথনি, কালো ও লাল রঙা মাটির পাত্র, স্থাপত্যের একাধিক নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস সমৃদ্ধ পর্যটন তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও একটি নাম। অন্তত তেমনটাই আশা করেন ভরতপুর গ্রামের বাসীন্দারা।
পানাগড় রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকে চার মাইল দূরে দামোদর নদের তীরে অবস্থিত এই ভরতপুর গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে বৌদ্ধস্তূপটি। গ্রামবাসীদের দাবি, এতদিন ধরে অবহেলায় পড়েছিল বৌদ্ধস্তূপটি। নতুন করে ফের খনন কার্য চলায় আরও কিছু ঐতিহাসিক তথ্য সামনে এসেছে। বৌদ্ধস্তূপটি দেখতে বহু মানুষ আসেন সারা বছর ধরেই। বৌদ্ধস্তূপটি পাঁচিল ও লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সর্বক্ষণ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা প্রহরায় থাকেন।





