১০ অক্টোবর ছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (World Mental Health Day)। সেই উপলক্ষ্যে TRA রিসার্চ নামে একটি কনজিউমার ইনসাইটস্ এবং ব্র্যান্ড অ্যানালিটিকস্ সংস্থা একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন শহরের মানুষদের মানসিক সুস্বাস্থ্য (Mental Well being) নিয়ে এই গবেষণা চলেছিল। মোট ১৬টি শহরের ১০০৩ জন নাগরিকের উপর চলা এই সমীক্ষায় নানা বিষয়ের উপর মানসিক সমস্যার কথা উঠে এসেছিল। শারীরিক সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ, অর্থনৈতিক চিন্তা ও আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্বেগ, পারিবারিক কারণে উদ্বেগ- এই সব বিষয় নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়টা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল।
advertisement
সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, মানসিক সুস্বাস্থ্যের দিক থেকে সব থেকে ভালো জায়গায় আছে কেরলের কোচি। এই শহরের স্কোর +১৭৭%। এর পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশের লখনউ এবং পঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী শহর চণ্ডীগড়। এই দুই শহরের স্কোর যথাক্রমে +১৪৭% এবং +১৪৪%। এ ছাড়াও মানসিক সুস্বাস্থ্যের নিরিখে উপরের দিকের স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ইনদওর এবং রাজস্থানের জয়পুরও। এদের স্কোর যথাক্রমে +১১৩% এবং +১০১%।
তবে মানসিক সুস্বাস্থ্যের দিক থেকে এই তালিকায় যথেষ্ট নিচের দিকে রয়েছে কলকাতা। কলকাতার পাশাপাশি খারাপ স্কোর আহমেদাবাদ এবং চেন্নাইয়েরও। এই তিন শহরের স্কোর যথাক্রমে +৯%, +৩% এবং -৮% (The worst mental health scores are displayed by Kolkata (+9% MWBI), Ahmedabad (+3% MWBI) and Chennai (-8% MWBI)। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, সব থেকে খারাপ জায়গায় রয়েছে চেন্নাই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চেন্নাইয়ের নাগরিকরা ক্রমবর্ধমান মানসিক উদ্বেগের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছেন না।
আরও পড়ুন- শিক্ষা দিয়েছিল কেরলের 'ওনাম', বঙ্গবাসী বুঝল কি? চরম আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে TRA-এর করোনাভাইরাস মেন্টাল ওয়েলবিইং ইমপ্যাক্ট (Coronavirus Mental Wellbeing Impact) রিপোর্ট প্রকাশের সময় সংস্থার সিইও এন চন্দ্রমৌলি বলেন, “গত বছর ভারতে বেশির ভাগ মানুষের সব থেকে বেশি উদ্বেগ ছিল অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে। যার হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে এই বছর সেই হারটা অনেকটাই কমে গিয়ে ৪৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে। পারিবারিক উদ্বেগ গত বছরের মতোই রয়েছে। খুব একটা কমেনি। মাত্র এক শতাংশ কমেছে। শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে উদ্বেগের হারও গত বছরের তুলনায় বিশেষ কিছুই হ্রাস পায়নি।” সেই সঙ্গে তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাপী মহামারির পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সে ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। আসলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং তা যে কোনও ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত ভাবে চন্দ্রমৌলি বলেন, “এই গবেষণা যাঁদের উপর চালানো হয়েছিল, তাঁদের কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন! এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তাঁদের উত্তর আমাদের কাছে খুব একটা অনভিপ্রেত ছিল না। এঁদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ সদর্থক উত্তর দিয়েছেন এবং তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা বন্ধু ও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে হই-হুল্লোড় করবেন। লকডাউন শিথিল হচ্ছে বলে ছুটি কাটাতে অথবা ধর্মীয় স্থানে যেতে চেয়েছেন মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ। অবসর যাপনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ এবং শপিং করতে যেতে চেয়েছেন ২১ শতাংশ মানুষ। তবে মুভি থিয়েটার যাওয়ার প্রশ্নেই সব থেকে খারাপ উত্তর এসেছে। কারণ এখন এবং অদূর ভবিষ্যতেও অনেকেই মুভি থিয়েটারে যেতে চাননি। মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ মুভি থিয়েটারে যেতে চান বলে জানিয়েছিলেন।”