আরও পড়ুন-Healthy Lifestyle: যৌন মিলনের পরেই এই জিনিসটা ঘটছে ? এর কী প্রভাব শরীরে পড়তে পারে জানুন
ফ্যাট, তেল, হরমোনের মতোই স্টেরল ক্যাটেগরিতে পরে কোলেস্টেরল (Cholesterol)। এটিকে যদি বাকি বিভিন্ন উপাদান থেকে আলাদা করে দেখা যায় তা হলে দেখা যাবে এর রঙ হলুদ। হলুদ ক্রিস্টালাইন সাবস্ট্যান্স। যা রক্তে বেশি পরিমাণে থাকলে হাই কোলেস্টেরল হিসেবে ধরা হয় এবং শরীরে জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে গণ্য করা হয়।
advertisement
এর প্রধান কারণ কোলেস্টেরল বেশি পরিমাণে রক্তে থাকলে তা রক্রে ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। চিকিৎসকদের কথায়, এই উপাদান রক্তে বেশি থাকলে রক্ত ধমনী দিয়ে চলাচলে সমস্যা হয় এবং ধমনীর যে দেওয়াল বা ওয়াল আছে তাতে আটকে থাকতে পারে।
ধমনীতে রক্তের গতিপথে বাধা
শরীর ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য প্রাথমিক স্তরেই চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি উপাদান ঠিক আছে কি না তার পরীক্ষা করে থাকে। এর মধ্যে কোলেস্টেরল অন্যতম। কোলেস্টেরল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বিভিন্ন অঙ্গ সচল রাখতে।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোলেস্টেরল বেশি পরিমাণে রক্তে থাকলে তা রক্তকে ঘন করে এবং ধমনীর গতিপথে বাধা দেয়। ধমনীর ভিতর এটি থেকে যায় এবং ধমনীর ওয়াল বা দেওয়ালকে শক্ত করে তোলে সঙ্গেই ভিতরে রক্ত চলাচলের রাস্তা সরু করে ফেলে। এমন হতে থাকলে একদিন ধমনী ব্লক বা বন্ধ হয়ে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত চলাচল আর করতে পারে না।
ধমনীতে রক্ত চলাচল করতে না পারায় ব্রেন এবং হার্টে তার প্রভাব পড়ে। এর জন্য় যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই কোলেস্টেরল সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। তবে, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব সোজা নয়। এটি কখন শরীর অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে তা বলা মুশকিল। অন্যান্য উপাদান শরীর বাড়লে বা কমলে যেমন তার কোনও না কোনও উপসর্গ থাকে, কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে তেমন থাকে না। তাই এটিকে সাইলেন্ট কিলারই বলা হয়ে থাকে।
তবে, এর মধ্যেও কয়েকটি ছোটো উপসর্গ এক্ষেত্রে থাকে, যা থেকে কোলেস্টেরল বাড়লে তা বোঝা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:১০০ ছেলেকে ডেট করেও সিঙ্গলই রয়েছেন এই সুন্দরী মডেল, পাওয়া যায়নি মনের মানুষ!
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিস (Peripheral Artery Disease)
কোলেস্টেরল যখনই রক্তে বেড়ে ধমনীর মুখ আটকে দেবে তখনই ব্যথা অনুভব হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যখন এই ব্যথা অনেক বেশি বেড়ে যায় তখন একে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিস (Peripheral Artery Disease) বা PAD বলা হয়।
PAD হলে হাঁটতে বা হাতের সাহায্যে কোনও কাজ করতে সমস্যা হতে পারে। যদি PAD অনেক সিভিয়ার হয় বা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে থাকে তা হলে লিম্বস নষ্ট হতে পারে। এবার অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, বাতের জন্য বা এমনি শীতকালে অনেকেরই হাঁটতে একটু সমস্যা হয় বা হাতে ব্যথা হয় যার জন্য হাতের সাহায্যে কাজেও সমস্যা হতে পারে। তা হলে PAD বোঝার উপায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, PAD বেশি থাকলে তা অনায়াসেই বোঝা যাবে পালস রেট মেপে। এই ধরনের সমস্যা হলে পালস রেট যদি নিয়মিত পরীক্ষা করা যায় তা হলে PAD তে আক্রান্ত কি না তা বোঝা যাবে।
আথেরসক্লোরোসিস (Atherosclerosis)
ধমনীতে ফ্য়াট ছেড়ে যাওয়া এবং তার জন্য আর্টারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মেডিক্যাল টার্ম অর্থাৎ চিকিৎসকদের ভাষায় একে আথেরসক্সোরেসিস বলা হয়। ফ্যাটি সাবস্ট্যান্স, সেলুলার ওয়েস্ট প্রোডাক্ট, ক্যালশিয়াম, ফিব্রিন ও কোলেস্টেরল আর্টারি বা ধমনীতে এই ডিপোসিট করতে পারে। কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে পায়ে ও হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে।
চোয়ালে ব্যথা
অনেকসময় সকালে ঘুম থেকে চোয়ালে ব্যথা অনুভব করেন অনেকে বা কথা বলতে গিয়ে চোয়াল নাড়তে সমস্যা হতে পারে, এতে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়। এগুলো সাধারণত হয় অ্যানজিনা - এ (angina- a) পেইনের জন্য। যদি কখনও হার্টে ঠিক মতো রক্ত সঞ্চার হতে না পারে, চলাচল করতে না পারে তা হলে তার জন্য এই পেইন বা ব্যথা হয়। অনেকসময় বুকে ব্যথাও হতে পারে।
চিকিৎসকরা তাই বলে থাকেন, হার্টে রক্ত চলাচল না হলে বা এই ধরনের ধমনীতে ব্লকেজ এলে সবসময় যে বুকে ব্যথা করবে তা নয়। হাতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা, অস্বস্তি এবং এই ধরনের একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যদি কোলেস্টেরল আগে পরীক্ষা করে থাকেন এবং তাতে তা সামান্যও বেশি দেখায় তা হলে এই ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এছাড়াও যদি এই ধরনের উপসর্গ অনেক বেশিদিন ধরে চলে বা থাকে শরীরে তা হলে তা এড়িয়ে না যাওয়াই ভাল।
ধমনীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হার্ট অ্যাটাকেরও কারণ হতে পারে অনেকসময় কারণ রক্ত চলাচল না করতে পারলে হৃদযন্ত্র কাজ করতে সমস্যা হয়।
কী খেলে বা কী না খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্যাড কোলেস্টেরল?
চিকিৎসকদের মতে, প্যাকেটজাত চাল, আটা, ময়দা এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কারণ পরিশোধনের ফলে সেগুলি থেকে সমস্ত পুষ্টিগুণ (Nutritions) হারিয়ে যায়। এমনকী ফাইবারও (Fibre) নষ্ট হয়ে যায়। তার বদলে দানা শস্য খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। তাতে সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যেতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে প্রতিদিনের ডায়েটে ওটস রাখা বাধ্যতামূলক। বাজারের প্যাকেটজাত ধবধবে ময়দা এড়াতে ডালিয়াও খাওয়া যেতে পারে।
খারাপ কোলস্টেরল কমাতে উপকারী ডালও
ভালো কোলেস্টেরল বজায় রাখতে প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে হবে ডাল। হার্টের জন্য তো বটেই, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ডাল ভালো কাজ করে। তবে এক্ষেত্রেও প্যাকেটজাত ডাল এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ডায়েটে থাক শাক-সবজি
ডায়েটে বেশি করে সবুজ শাক-সবজি রাখতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, খাবারের আগে স্যালাড নিলে বেশি শাক-সবজি খাওয়া যায়। স্যালাডে রাজমা, ছোলা রাখা যেতে পারে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সবজির মধ্যে ঢ্যাঁড়স ও বেগুনের জুড়ি মেলা ভার। রান্না অবশ্যই কম তেলে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সঙ্গে থাক ফল
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে ফল খাওয়া জরুরি। আপেল, জাম এক্ষেত্রে উপকারী। প্রতিদিনের ডায়েটে একটা ফল রাখা উচিত। ভিটামিন C যুক্ত ফলে থাকা পেকটিন ফাইবার শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া ভালো কোলেস্টেরল বজায় রাখতে বিভিন্ন বাদামও কাজে দেয়।