জীবনের পথ আদৌ মসৃণ ছিল না চন্দনের জন্য। প্রতিটা বাঁকে, পরতে-পরতে নানা চরাই-উতরাই, ওঠা-পড়ার সাক্ষী হতে হয়েছে তাঁকে। তবুও থামেননি, মাথা নত করেননি, মানেননি হার! পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অন্তর্গত প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কাড়িহেসা। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা চন্দন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় এক দুর্ঘটনায় তাঁর দুটি পা-ই প্যারালাইসড হয়ে যায়। সেই থেকে চন্দনের নিত্যসঙ্গী হুইল চেয়ার।
advertisement
রাচি, বেঙ্গালুরু, ভেলোর-সহ বিভিন্ন জায়গাতে চলে চন্দনের চিকিৎসা। প্রায় তিন বছর পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেতে হয়। কিন্তু চন্দন হারতে শেখেননি। নতুন করে শুরু হয় লেখাপড়া। ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। তাই বরাবরই দুর্দান্ত রেজাল্ট হত। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের পর ২০২৫ সালে ডাক্তারির নিট পরীক্ষা দেন চন্দন। কিন্তু নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তির জন্য ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার সময় তাঁকে শারীরিকভাবে অক্ষম বলে জানানো হয়। বলা বাহুল্য, এই ঘটনা চন্দন ও তারঁ পরিবারের কাছে বিরাট বড় ধাক্কা ছিল। কিন্তু তাতেও তিনি হার মেনে নেননি।  ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
চন্দন এবং তার পরিবার প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতোর সহায়তা নেন এবং হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে চন্দনের ভেরিফিকেশন করা হয় এবং তিনি পাস করেন। বর্তমানে আরামবাগের প্রফুল্ল চন্দ্র সেন সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির চন্দন কুমার মাঝি। তাঁর ভাষায়, ” বহু বাধার সম্মুখীন হয়েছি। পরিবার সবসময় পাশে ছিল। এখন আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ। নিজের সমস্ত কাজ নিজেই করতে পারি। অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এটা আমার কাছে বিরাট বড় পাওনা।”
চন্দনের বাবা ভোলানাথ কুমার মাঝি জানান, তিনি সবসময় ছেলের পাশে থেকেছেন। কখনও তাঁকে ভেঙে পড়তে দেননি। বিপদের দিনে তাঁদের সাহায্য করেছেন প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো।  আগামী দিনে ছেলেকে নিয়ে আরও অনেক স্বপ্ন রয়েছে তাঁর।





