পররিচয় শুনলে চমকে যাবেন! তিনি আসলে একটি বড় জমিদারবাড়ির কেয়ারটেকার এবং কুলপুরোহিত। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের জঙ্গলের ভিতর ছোট্ট গ্রাম কালিকাপুর। সেখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বহু বছরের পুরনো কালিকাপুর জমিদারবাড়ি। এই বাড়িতেই অসংখ্য বাংলা-হিন্দি সিনেমার শুটিং হয়েছে। এই রাজবাড়িরই দেখাশোনার দায়িত্ব সামলান গ্রামেরই ছেলে পিকলু চক্রবর্তী। সকলের কাছে তিনি শুধু ‘পিকলু দা’।
advertisement
পিকলুর বাবা ছিলেন এই জমিদারবাড়ির কুলপুরোহিত। বাবার মৃত্যুর পর এখন পিকলুই সবটা সামলান। পুরনো প্রাসাদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে উৎসব-পুজোতেও তাঁর ভূমিকা রয়েছে। ছোট থেকেই নাটকের প্রতি ভালোবাসা ছিল পিকলুর। গ্রামের নাট্যমঞ্চে অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু জীবনে বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ আসবে, এটা ভাবতে পারেননি কোনও দিন। বহু বছর আগে এক ভদ্রলোক কালিকাপুরে আসেন। তিনি সিরিয়ালের জন্য লোকেশন খুঁজছিলেন। মন্দির ও বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন পিকলু। তখনই কথায় কথায় ওই ব্যক্তি বলে বসেন ‘কালিকাপুরে শুটিং করব।’
তার পরই শুরু হল সন্দীপ রায়ের বিখ্যাত সিরিয়াল ‘চিলেকোঠা’র শুটিং। সেখানেই পিকলুর প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আসে। খুব ছোট চরিত্র, কিন্তু সেটাই ছিল তাঁর আলোকবৃত্তে আসার প্রথম পদক্ষেপ। এর পর থেকে যখনই কালিকাপুরে কোনও পরিচালক শুটিং করতে আসতেন, তখন অভিনয়ের সুযোগ পেলেন পিকলু। কখনও পুলিশ, কখনও সাধু, কখনও পুরোহিত, আবার কখনও পাড়ার মোড়ল। তাঁর অভিনয়যাত্রায় রয়েছে অসংখ্য সুপারহিট প্রজেক্ট যেমন ‘বাস্তুসাপ’, ‘বহুরূপী’, ‘মিরা’-র মতো ছবি, ‘ফেরারি মন’, ‘রানি রাসমনি’র মতো সিরিয়াল। এমনকি হিন্দিতে কাজলের ‘মা’ সিনেমার একটি গানে কাজল ও তাঁর মেয়েকে আশীর্বাদ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। পিকলু চক্রবর্তী বলেন, ” এই সবই রাজবাড়ির মা দুর্গা এবং সাধারণ মানুষের আশীর্বাদ। আমারও আভিনয়ের সুপ্ত বাসনা ছিল, সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে।”
শুটিং-এর সুবাদেই পিকলুর দেখা হয়েছে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে। অমিতাভ বচ্চন, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমার দেব, মিঠুন, ভিক্টর, জিৎ, সোহম, হিরণ, আবির, শিবপ্রসাদ… কত তারকাকেই না কাছ থেকে দেখেছেন তিনি, এমনকি তাঁদের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন আবার ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। তিনি কোনওদিনই ভাবতে পারেননি, তাঁর মতো একজন সাধারণ কেয়ারটেকারের জীবনে এমন সুযোগ আসবে। পিকলু দা আরও বলেন, “এখন খুবই ভাল লাগে , অনেক বড় বড় পরিচালকের সান্নিধ্যে আমি আসতে পেরেছি। সাউথের ডিরেক্টরদের সঙ্গেও আমার পরিচয় হয়েছে। ”
পিকলু দার কাছে এসবই এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়। তিনি এখনও সেই মাটির মানুষ, যিনি প্রতিদিন রাজবাড়ির যত্ন নেন, পুজো করেন, অতিথিদের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখান। হয়তো বড় কোনও নায়ক তিনি নন, কিন্তু তাঁর জীবনের কাহিনি যে কোনও ছবির চেয়ে কম নয়। জমিদারবাড়ির কেয়ারটেকার থেকে বাংলা-হিন্দি সিনেমার অভিনেতা, পিকলু দার জীবনটা যেন সত্যিই এক সিনেমা!