ফ্যাটি লিভার আসলে কী?
লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট (Signs Of Fatty Liver) জমা হলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এর চিকিৎসা না-হয়, তা হলে সেটা বেড়ে গিয়ে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস (NASH)-এর আকার ধারণ করতে পারে। আর এটা থেকেই লিভার সিরোসিস হতে পারে, এমনকী লিভার ফেলিওরেরও সম্ভাবনা থাকে। যদি ঠিক সময়ে এই রোগ ধরা না-পড়ে অথবা সময়ে এর চিকিৎসা না-হয়, তা হলে কিন্তু সমূহ বিপদ! কারণ নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। এ বার দেখে নেওয়া যাক, এই রোগের কিছু উপসর্গ (Symptoms)।
advertisement
আরও পড়ুন: ব্লাড সুগার নিয়ে চিন্তায় আছেন? সমাধানের পথ বাতলে দেবে আয়ুর্বেদ!
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের উপসর্গ:
ক্লান্ত বা অবসন্ন লাগা
খিদের অভাববোধ
চুলকানি
জন্ডিস
আচমকা দেহের ওজন হ্রাস
ত্বকে কালশিটে দাগ
এ বার এই উপসর্গগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: আটা-ময়দা মেখে রাখলে কালো হয়ে যায়? মেনে চলুন এই কয়টি নিয়ম...
ক্লান্ত বা অবসন্ন লাগা:
মারাত্মক ক্লান্তি ভাব কিন্তু লিভারের (Signs Of Fatty Liver) সমস্যার একটা বড় উপসর্গ। কানাডিয়ান জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিতে একটা গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে যে, মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারে পরিবর্তনের জেরেই ক্লান্তি ভাব আসে। তাই অ্যালকোহলিক আর নন-অ্যালকোহলিক উভয় ধরনের ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রেই এই লক্ষণ ফুটে ওঠে। তাই যদি কেউ মাঝে-মাঝেই মারাত্মক ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তা হলে তাঁর দেরি-না করে লিভারের পরীক্ষা করানো উচিত।
খিদে কমে যাওয়া:
নানা রকম কারণে অনেকের খাওয়ার ইচ্ছে বা খিদে চলে যায়। এ বার একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে কারও খিদে না-থাকলে এবং তার সঙ্গে গা গোলানো বা বমি-বমি ভাব, মাথা ব্যথা থাকলে বুঝতে হবে বিষয়টি গুরুতর। তাই বলা যায় যে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়েছে কি না, সেটা বোঝার উপায় হল- খিদের অভাব। এমন উপসর্গ যদি দেখা দিতে থাকে, তা হলে দেরি না-করে লিভার পরীক্ষা করাতে হবে।
চুলকানি:
জানলে হয় তো অবাক হবেন, ত্বক দেখেও বোঝা যায় লিভার সুস্থ কি না। আসলে লিভারের রোগের কারণে পিত্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে। যার প্রভাব দেখা যায় আমাদের ত্বক বা চামড়ার উপর। গবেষণা বলছে যে, লিভারের রোগের কারণে পিত্ত লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় আর বেড়ে যাওয়া পিত্ত লবণ গিয়ে ত্বকের নিচে জমা হতে থাকে। ফলে প্রুরিটাস বা চুলকানি দেখা দেয়। এ ছাড়াও স্কিনে চুলকানির আরও নানা কারণ থাকে।
জন্ডিস:
দেহে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়লে ত্বক আর চোখ হলুদ হয়ে যেতে থাকে। আসলে লিভার থেকেই এই হলুদ রঙের পদার্থ নির্গত হয়, যার ফলে ত্বক আর চোখ হলদেটে হয়ে যেতে থাকে। আর এই অবস্থাকে জন্ডিস বলা হয় এবং পরীক্ষা করে এই রোগ ধরা পড়লেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
আচমকা ওজন কমে যাওয়া:
লিভার অসুস্থ কি না, তা বোঝার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল- দেহের ওজন আচমকা কমে যাওয়া। এটা যেমন লিভার সিরোসিসের লক্ষণ হতে পারে, আবার তেমনই ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ হেপাটাইটিস সি-এরও লক্ষণ হতে পারে। এই রোগের ক্ষেত্রে লিভারে প্রদাহ হয়, যন্ত্রণা হয় এবং ফুলে যায়।
ত্বকে কালশিটে দাগ:
অনেক সময় দেখা যায়, ত্বকে কালশিটে ভাব বা ক্ষত রয়েছে। আর লিভারে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, সেটা ত্বকের সেই ক্ষত দেখে বোঝা যায়। আসলে লিভারে সমস্যা থাকলে লিভার পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লটিং প্রোটিন উৎপাদন করতে পারে না। ফলে সাধারণের তুলনায় একটু বেশি মাত্রাতেই রক্তক্ষরণ হয় এবং শরীরে বা ত্বকে কালশিটে দাগ বা ক্ষত চিহ্ন ফুটে উঠবে। যদিও দেহে কালশিটে দাগের একমাত্র কারণ লিভারের রোগ নয়, আরও অন্যান্য কারণও রয়েছে।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণ:
কারও লিভারে ফ্যাট জমা হয়, আবার কারও লিভারে সেটা হয় না। ঠিক কী কারণে এমনটা হয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে বলতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের কারণে প্রদাহ হয়, যা শেষ পর্যন্ত সিরোসিসের আকার ধারণ করে। আর এর সঠিক কারণ কী, সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বোঝা যায় না। এ বিষয়ে যেটুকু বোঝা যায়, সেটুকু সীমিতই।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস-এর কারণ:
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা ওবেসিটি
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
হাই-ব্লাড সুগার (হাইপারগ্লাইসিমিয়া), প্রিডায়াবেটিস বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ
রক্তে উচ্চমাত্রার ফ্যাট তথা ট্রাইগ্লিসারাইডের উপস্থিতি
এই ধরনের শারীরিক সমস্যার কারণেই লিভারে ফ্যাট জমতে শুরু করে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে লিভারে জমা হওয়া অতিরিক্ত ফ্যাট লিভারের কোষের জন্য বিষ হয়ে ওঠে। যার ফলে লিভারে প্রদাহ শুরু হয় এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস হতে পারে।
আরও পড়ুন: অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং প্রতি মাসের যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত খান এই খাবারগুলি
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকির বিষয়:
কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সম্ভাবনাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে তোলে। সেগুলি হল-
হাই কোলেস্টেরল
রক্তে উচ্চমাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইডের উপস্থিতি
মেটাবলিক সিন্ড্রোম
ওবেসিটি অথবা তলপেটে জমা হওয়া মেদ
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম
স্লিপ অ্যাপনিয়া
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
হাইপোথাইরয়েডিজম
হাইপোপিটুইটারিজম
নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিসের ঝুঁকি কাদের ক্ষেত্রে বেশি?
প্রবীণ এবং বৃদ্ধ মানুষদের
যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে
যাঁদের তলপেটে মেদ জমে রয়েছে
যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিসের মধ্যে ফারাক করা খুবই মুশকিল।
কী ভাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি কমানো যায়?
স্বাস্থ্যকর খাবার:
এই রোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়। আর স্বাস্থ্যকর ডায়েটে সবুজ শাকপাতা বেশি করে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ফলমূল, সবজি, হোল গ্রেইন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
যাঁদের ওজন ক্রমবর্ধমান বা যাঁরা ওবেসিটিতে আক্রান্ত, তাঁদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যা যা করণীয়, সব কিছু করতে হবে। রোজকার ক্যালোরির পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, আর সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত, ব্যায়াম বা এক্সারসাইজও করতে হবে।
এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম:
সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন শারীরিক কসরত বা এক্সারসাইজ করতে হবে। তবে তার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কী ধরনের শারীরিক কসরত বা এক্সারসাইজ কার জন্য উপযুক্ত, সেই বিষয়ে ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন।