পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সাধারণ লো-কার্ব ডায়েট হল এমন একটি ডায়েট, যেখানে কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরিমাণ ৬০ থেকে ১৩০ গ্রামের মধ্যে সীমিত রাখতে হয়। আবার কিটোজেনিক ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ থাকে ৩০ গ্রামেরও কম। আবার কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করতে হবে কিংবা সেটা খুবই স্বল্প পরিমাণে খেতে হবে। এর মধ্যে পড়বে শস্য, লেগিউম, ফল, মিষ্টি, পাস্তা এবং স্টার্চযুক্ত সবজি। এগুলোর পরিবর্তে ডায়েটে যোগ করা যেতে পারে মাংস, পোলট্রি, মাছ, ডিম, স্টার্চবিহীন সবজি, বাদাম এবং বীজ-জাতীয় খাবার।
advertisement
আরও পড়ুন: শরীরে এই ৭টি লক্ষণ দেখা গেলেই মহিলারা সাবধান, হয়তো থাবা বসিয়েছে থাইরয়েড
আবার ডায়েটে বদল আনলে হয়তো তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খানিক সময় নেবে আমাদের শরীর। অর্থাৎ নতুন ডায়েট দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের জন্য কাজ করবে কি করবে না, সেটা বুঝতে শরীরের বেশ খানিকটা সময় লাগে। তাই লো-কার্বোহাইড্রেট বা লো-কার্ব ডায়েট বা স্বল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ডায়েট নতুন করে অভ্যেস করার ক্ষেত্রে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, আলোচনা করে নেওয়া যাক সেই বিষয়টাই।
উত্তেজনা এবং মাথা ব্যথা:
লো-কার্ব নতুন ভাবে ডায়েট শুরু করার ক্ষেত্রে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবার আগে দেখা যায়, সেটা হল - মাথা ব্যথা। এটা হয় সাধারণত আমাদের মস্তিষ্ক গ্লুকোজের উপরেই থাকতে পছন্দ করে এবং এনার্জির জন্য কিটোনে যাওয়ার আগে গ্লুকোজের শেষ অংশটুকু বার্ন করতে শুরু করে।এনার্জির বিকল্প উৎসের উপরেই অনবরত লক্ষ্য স্থির করতে থাকে। ফলে লো-কার্ব ডায়েটে থাকা মানুষজন উত্তেজনা বোধ করতে পারেন এবং কোনও কিছুতে মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যাও হতে পারে। আসলে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো ভাল রাসায়নিক নিঃসরণ করে কার্বোহাইড্রেট। লো-কার্ব ডায়েটের কারণে তাই বিষণ্ণতা এবং উৎসাহের অভাব বোধ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ফুলকপি খেলেই গ্যাসে পেট ফুলে ফেঁপে জয়ঢাক? জানুন এর কারণ ও সমস্যার সমাধান
দুর্বলতা এবং অবসাদ:
শরীর যাতে সুস্থ ভাবে চালিত হয়, তার জন্য আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেটকেই পছন্দ করে। ফলে সেই উৎস আচমকা কমে গেলেই এনার্জির অভাব হতে পারে এবং দুর্বল ভাব ও অবসাদ আসতে পারে। এটাই লো-কার্ব ডায়েটের প্রাথমিক পর্যায়। আসলে নতুন ডায়েটের সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় লাগে। এ-বার কেউ যদি আবার আগের ডায়েটে ফিরে যেতে চান, সে-ক্ষেত্রেও কিন্তু প্রথম-প্রথম কয়েক দিন অবসন্ন ভাব আসতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
রোজকার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং শস্য এবং বিনস জাতীয় খাবারের মতো উচ্চ পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না-খাওয়ার দরুন মলত্যাগে সমস্যা হতে পারে।
পেশিতে ক্র্যাম্প:
উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ গোটা শস্য হল নিউট্রিয়েন্টস এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সোডিয়ামের মতো মিনারেলের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আর আমাদের দেহের পেশিগুলির যাতে সঠিক কার্যকারিতা বজায় থাকে, তার জন্য এই উপাদানগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফলে এই ধরনের খাবার ডায়েট থেকে বাদ দিলে পেশিতে ক্র্যাম্প হতে পারে। তবে যদি বাদও দেওয়া হয়, এই সমস্যা এড়াতে তার বিকল্প উৎস ডায়েটে যোগ করা বাঞ্ছনীয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং মুখে খারাপ স্বাদ:
যাঁরা লো-কার্ব ডায়েটের অভ্যেস গড়ে তুলেছেন, তাঁরা এই দুই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। আসলে মুখে খারাপ স্বাদ এবং মুখ কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসে দুর্গন্ধ হল লো-কার্ব ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েটে অভ্যস্ত হলে শরীর প্রয়োজনীয় গ্লাইকোজেন পায় না এবং তা কিটোনের দিকে চলে যায়। আর মূত্র এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে কিটোন শরীর থেকে দূর হয়ে যাবে। আসলে কিটোন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে মুখে ও শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়।
অতএব, লো-কার্ব ডায়েট যদি মেনে চলতেই হয়, তাহলে নিউট্রিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়ার দরকার আছে, একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন যে ব্যক্তিভেদে কার্বের পরিমণ কতটা কমিয়ে আনলে ভাল হয়!