শীতল ষষ্ঠীতে পুজো করা হয় শিল-কে ৷ অতীতের সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সঙ্গীকেও সেদিন এভাবে মূল্য দেওয়া হয়। মূল্যদানের এই রীতিই তিল তিল করে আমাদের জীবনের মুহূর্তগুলিকে অমূল্য করে তোলে৷ যাঁর নেপথ্যশিল্পী সংসারের অভিভাবিকা গৃহিণীরাই৷ দিল্লিপ্রবাসী সংযুক্তা চক্রবর্তী শীতল ষষ্ঠী ব্রত দেখেছেন বিয়ের পর৷ জানালেন, ‘‘এই ব্রতে শ্বাশুড়িমা শিলনোড়া পুজো করেন৷ আগে হলুদ ছোপানো কাপড় দিয়ে করা হত৷ এখন নতুন গামছায় সিঁদুর ও হলুদের টিপ দিয়ে তার পর পুজো করা হয়৷ তার আগে শ্রী পঞ্চমী রাতে মা খুব যত্ন করে গোটা সিদ্ধ রান্না করেন৷’’
advertisement
শীতের মরশুমি আনাজপাতিই এর মূল উপকরণ৷ গোটা মুগ, গোটা কলাই, জোড়া বেগুন, জোড়া সিম, শিষপালং, সজনেফুল, বাঁধাকপি হল এই রান্নার প্রধান উপকরণ৷ তবে হেঁসেল বিশেষে উপকরণে কিছুটা রকমফের তো হয়ই৷ উপকরণ যা-ই হোক না কেন, মূল বিষয় হল সব কিছু গোটা অবস্থায় সুসিদ্ধ হতে হবে৷
আরও পড়ুন : ছেলেমেয়ের জন্য বাড়িতেই রাঙিয়ে তুলুন বাসন্তী পাঞ্জাবী ও শাড়ি, রইল সহজ পদ্ধতি
সংযুক্তা জানালেন, তাঁর শ্বাশুড়িমা এই সব উপকরণ প্রেশার কুকারে গোটা অবস্থায় সিদ্ধ করে রেখে দেন৷ পর দিন তিনি স্নানের পর শিলবাটার পুজো করে ওই গোটাসিদ্ধ খান৷ সেদিন তিনি সারাদিন ঠান্ডা খাবার খান৷ গরম কিছু খান না৷ এই শীতল থেকেই ‘শীতল ষষ্ঠী’৷ বাড়ির অন্যান্যরা না খেলেও ব্রতী অর্থাৎ বাড়ির গৃহিণীকে এই খাবার খেতে হবে৷
গোটা সিদ্ধর সঙ্গে কুলের চাটনি খাওয়ার স্মৃতি ভুলতে পারেন না অনন্যা গঙ্গোপাধ্যায়৷ অনেক পরিবারে এর সঙ্গে থাকে পান্তাভাতও৷ শীত থেকে বসন্তে পা দেওয়ার সময় মরশুম পরিবর্তনে রোগবালাই থেকে বাড়ির কচিকাঁচাদের রক্ষা করাই এই ব্রতপালনের মূল লক্ষ্য৷ বলছেন অনন্যা৷ প্রাক-টিকা যুগে এই গোটা সিদ্ধই ছিল বসন্ত মহামারি থেকে রক্ষাকবচ৷
আরও পড়ুন : মশলার দাগ-সহ তেলচিটে গ্যাসের আভেন ও বার্নার সাফ করতে নাজেহাল? আপনার জন্য ঘরোয়া সমাধান
সেই রক্ষাকবচ প্রতি বছর সংসারের জন্য নিষ্ঠাভরে রান্না হয়ে চলেছে মালিকা গড়াইয়ের পরিবারে৷ তাঁর শ্বাশুড়িমা মীরাদেবী গোটাসিদ্ধতে দেন খোসা সমেত বিউলির ডাল, গোটা ছোট আলু, গোটা রাঙাআলু, গোটা সিম, খোসাসমেত কড়াইশুঁটি, সজনেফুল ও বেগুন৷ সামান্য নুন দিয়ে কোনও ফোড়ন ছাড়া এই রান্না হয়৷ সঙ্গে থাকে পোস্তর বড়া, বাঁধাকপির তরকারি এবং পান্তাভাত৷ পর দিন সকালে স্নানের পর শিলকে পুজো করে এই গোটাসিদ্ধ খাওয়া হয় সামান্য সর্ষের তেল দিয়ে৷ সেদিন সব রকম গরম খাবার তো বটেই, ব্রতর নিয়মরক্ষার কারণে চা-ও পান করেন না প্রবীণা মীরা৷ কোনও পুরোহিতকে ছাড়া গৃহিণীর আন্তরিক মঙ্গলকামনাই এই লৌকিক পার্বণের ভরকেন্দ্র, মনে করেন তিনি৷
আরও পড়ুন : দিন শুরু করুন গরম জলে চুমুক দিয়ে, দূর থাকবে বহু জটিল সমস্যা
নিজেদের বাড়িতে না হলেও অনেকেই ভালবাসেন গোটা সিদ্ধ পার্বণ৷ তাঁদের মধ্যেই একজন অর্পিতা পাল৷ রন্ধনপটিয়সী অর্পিতার হেঁসেলে রোজই জন্ম হয় লোভনীয় সব পদের৷ এই সুগৃহিণী নিজেও ভোজনরসিক৷ জানালেন, ষষ্ঠী বলে এই রান্নায় ছ’ রকম উপকরণ থাকবেই৷ কেউ তার থেকে বেশিও দিতে পারেন৷ ছ’ রকম উপকরণের মাহাত্ম্যেই জড়িয়ে থাকে ষড়ঋতু থেকে সুস্থতার চাবিকাঠি৷