ফর্টিস নয়ডার নিউরোলজির ডিরেক্টর এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. জ্যোতি বালা শর্মা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা কিন্তু ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর। কম নড়াচড়া এবং অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে হওয়া সেডেন্টারি লাইফস্টাইল তা মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা উভয়ের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অতিরিক্ত বসে থাকার মাসুল:
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অতিরিক্ত সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে স্মৃতিশক্তিজনিত সমস্যা হতে পারে। আর চিন্তাভাবনাও মন্থর হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে তো বটেই! ডা. শর্মার ব্যাখ্যা, দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার ফলে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসে। আসলে স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী মস্তিষ্কের এলাকাগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম হল – মিডিয়াল টেম্পোরাল লোব। এমনকী হোয়াইট ম্যাটারেরও ক্ষতি হয়।
advertisement
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিডিএনএফ (Brain-Derived Neurotrophic Factor)। এটি আসলে একটি প্রোটিন। যা নিউরনের টিকে থাকা এবং বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বিডিএনএফ-এর মাত্রা হ্রাস করে। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি এবং শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিপ্পোক্যাম্পাসে তা হ্রাস হয়। অন্যদিকে এক্সারসাইজ করলে বিডিএনএফ-এর মাত্রা বাড়ে আর মস্তিষ্কও সচল থাকে।
নিষ্ক্রিয়তা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ডমিনো এফেক্ট:
নড়াচড়ার অভাবের জেরে একের পর এক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ক্ষতি হয় মস্তিষ্কের। লখনউ মেদান্ত হাসপাতালের নিউরোলজি ইউনিটের ডিরেক্টর ডা. রতিশ জুয়াল বলেন, ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা আসলে সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের ফলাফল। এই বিষয়গুলি স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত, ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া এমনকী অ্যালজাইমার্স রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ডা. জুয়ালের মতে, নাড়াচাড়ার অভাবে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং হিপ্পোক্যাম্পাসে রক্তপ্রবাহ কম হওয়ায় মেজাজ নষ্ট করে দেয়, মনঃসংযোগও নষ্ট করে দেয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং মন্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড এবং টাউ প্রোটিন জমার ক্ষেত্রে রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে বসে থাকার অভ্যাস।
এক্সারসাইজ: মস্তিষ্কের সেরা ওষুধ:
লখনউয়ের ম্যাক্স সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটালের নিউরোলজি ডিরেক্টর ডা. অভিষেক শ্রীবাস্তব বলেন, নিয়মিত শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে মস্তিষ্কের কোষে কোষে পৌঁছে যায় জরুরি অক্সিজেন এবং নিউট্রিয়েন্টস। যা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়িয়ে দেয়। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বেড়ে যায়। আবার এটি বিডিএনএফ-এর রিলিজে সহায়তা প্রদান করে। যা নিউরনের অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। সেই সঙ্গে নিউরোডিজেনারেশনের বিরুদ্ধে একটা সুরক্ষাকবচ গড়ে তোলে। তবে ডা. শ্রীবাস্তব সতর্ক করে বলেন যে, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়:
১. অ্যালজাইমার্স এবং পার্কিন্সনস-এর মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ
২. মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস এবং এএলএস
৩. ডিপ্রেশন এবং উত্তেজনা বা অ্যাংজাইটি
৪. ক্রনিক ব্যথা এবং ব্রেন স্ট্রোক
উন্নত মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাপনে ছোটখাটো সাধারণ পরিবর্তন আনলেই তার গভীর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। ডা. জুয়ালের পরামর্শ, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন অন্ততপক্ষে আধ ঘণ্টা এরোবিক এক্সারসাইজ করলেই যথেষ্ট। শুধু তা-ই নয়, হাঁটাহাঁটি, জগিং, সাঁতার কাটা অথবা সাইকেল চালালেও দারুণ উপকার পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন যে, এলিভেটরের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি ডেস্কে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলার পরিবর্তে বরং পায়চারি করতে করতে কথা বলতে হবে। এটুকুই বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে। শারীরিক উপকারিতার উর্ধ্বে গিয়ে এক্সারসাইজ ডোপামিন এবং সেরোটোনিন বুস্ট করে। যা মেজাজ ভাল করে এবং স্মৃতিশক্তিকেও প্রখর করতে সহায়ক। সেই সঙ্গে স্লিপ কোয়ালিটি বা ঘুমের মানও উন্নত হয়। ডা. শর্মা সব শেষে বলেন যে, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল আসলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মস্তিষ্কের জন্য বিপদ ডেকে আনে। শারীরিক কসরত শুধু শরীরের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের জন্যও সমান ভাবে উপকারী।