শান্তিপুরের মৃৎশিল্প বহু পুরনো এবং বিখ্যাত। এখানকার বহু পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাটির মূর্তি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এ বারের রথকে সামনে রেখে তাঁরা রাতদিন এক করে কাজ করছেন। এক মৃৎশিল্পী জানালেন, “এ বছর অন্যবারের থেকে চাহিদা অনেক বেশি। ছোট-ছোট মূর্তিই বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যেক বছরই এই চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশি করে। আগে শুধু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হত, এখন বাইরে থেকেও অর্ডার আসছে।”
advertisement
মাটির তৈরি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি এখন বাজারে মিলছে বিভিন্ন মাপে—৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে দেড়-দু’ফুট পর্যন্ত। কিছু মূর্তিতে মসৃণ রঙের কাজ, আবার কিছুতে হাতের আঁকা অলঙ্করণ। মূর্তির দাম নির্ধারণ করা হয় মূর্তির মাপ অনুযায়ী। অনেকে সেট হিসেবে তিনটি মূর্তি একসঙ্গে কিনছেন এবং নিজেদের ঘরের ছোট রথে বসিয়ে পুজো করছেন। গত বছর ১৫০ পিস মূর্তি বিক্রি করেছিলেন তারা এ বছর সেটি ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। কিছু মূর্তি বিক্রি হবে কারখানা থেকে আর বাকিগুলি বিক্রি হয়ে যাবে রথের মেলা থেকে
শুধু রথ বলে নয়, অনেকেই এখন ঘর সাজানোর জন্য বা পুজোর জন্য শান্তিপুরের মূর্তি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু পরিবারই জানান, চাহিদা থাকলেও তাঁরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত। প্রশিক্ষণ, সস্তা কাঁচামাল এবং বিক্রির মঞ্চ থাকলে এই ঐতিহ্য আরও ছড়িয়ে পড়তে পারত।
আরও পড়ুন : ওজন ৬০ টন! ১৪ চাকার লোহার রথের রশিতে পড়বে টান! প্রাচীন ফরাসডাঙার আড়াই শতকের রথযাত্রার ইতিহাস মন ছুঁয়ে যাবে
শুধু জগন্নাথ বলরাম কিংবা সুভদ্রা দেবী নয়, শান্তিপুরের রথযাত্রার বিশেষত্ব হল, এখানে রথে বসেন রঘুনাথ অর্থাৎ রামের মূর্তি। সেই মূর্তিও কিন্তু বিক্রির জন্য তৈরি হচ্ছে। রথযাত্রা মানেই বাংলার ঘরে ঘরে ধর্মীয় আবেগ ও আনন্দ। সেই সঙ্গে শান্তিপুরের মতো অঞ্চলে এটি জীবিকার অন্যতম ভরসাও। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর মাটির মূর্তি কেবল পুজোর সামগ্রী নয়, বরং বাংলার লোকশিল্পেরও পরিচায়ক। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আরও যত্ন ও সংগঠিত উদ্যোগ।