TRENDING:

Psychologist on Ragging: আমাদের সন্তানরাই হয় র‍্যাগিং করছে বা এর শিকার হচ্ছে, কী করবেন অভিভাবকরা, জানালেন মনোবিদ

Last Updated:

Psychologist on Ragging: দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারকে কোনওমতেই মান্যতা দেবেন না

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
র‍্যাগিং-এর জন্য কুঁড়িদের স্বপ্ন ঝরে যাওয়া মধ্যযুগীয় বর্বরতাই৷ অসহায় অভিভাবকদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কথা বললেন ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান শ্রীময়ী তরফদার৷ নিউজ18 বাংলার হয়ে শুনলেন অর্পিতা রায়চৌধুরী
সব জায়গায় ক্ষমতার লড়াই একটা বড় বিষয়
সব জায়গায় ক্ষমতার লড়াই একটা বড় বিষয়
advertisement

আচমকা কলেজের দিনগুলির হস্টেল-লাইফেই কি র‍্যাগিং শুরু হয়? নাকি এই প্রবণতা স্কুলজীবনেও ধরা পড়ে, আমরা খেয়াল করি না? বা নজরে এলেও এড়িয়ে যাই?

স্কুলজীবনে এই প্রবণতা থাকতেই পারে। যেখানেই হোক না কেন, র‍্যাগিং-এর জন্য পরিস্থিতি ও পরিবেশ দুই-ই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতার একটা বিষমাকার তো এখানে আছে। যদি দেখা যায়, র‍্যাগিং করলে আমার পারিপার্শ্বিক আমায় একঘরে করবে না, তাহলে আমি নিশ্চয়ই ভাবব না দু’বার। কিন্তু যদি দেখি চারদিক থেকে জোটবদ্ধ প্রতিবাদ, বাধা আসছে, সেক্ষেত্রে আমি এগোব না। একজন কোন সমষ্টি, কোন পরিস্থিতি ও পরিবেশে আছে, তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করছে সে র‍্যাগিং করবে, নাকি করবে না। অপরাধমূলক প্রবণতা আমার মধ্যে থাকতেই পারে। কিন্তু সেই প্রবণতা প্রকাশ্যে আসবে, নাকি আসবে না, সেটার সুযোগ করে দেয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি।

advertisement

তার মানে নবাগতদের উপর বয়োজ্যেষ্ঠদের অত্যাচারের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে পরিবেশ ও পরিস্থিতি?

অবশ্যই। প্রথমত একজন দুর্বল কাউকে পেতে হবে, যার উপর আমি নির্যাতন করতে পারি। দ্বিতীয়ত আমার পারিপার্শ্বিক যদি আমার আচরণকে অন্যায় বলে গ্রাহ্য না করে, তাহলে তো আমি ইতস্তত করব না।

এখন স্কুলস্তরে ‘বুলি’ কথাটা খুব প্রচলিত। সোজা ভাষায় যাকে বলে দল বেঁধে কারওর উপর গা জোয়ারি দেখানো। এই আচরণই কি পরবর্তীতে র‍্যাগিং হয়ে দেখা দিচ্ছে?

advertisement

সব জায়গায় ক্ষমতার লড়াই একটা বড় বিষয়। তবে তার মানে এই নয় যে স্কুলে যে পড়ুয়া কাউকে উত্যক্ত করছে, সে পরবর্তীতে কলেজজীবনে র‍্যাগিং করবে। হয়তো উল্টোটা হল। দেখা গেল, যে স্কুলজীবনে নিজে খুব নির্যাতিত হয়েছে, সে কলেজে গিয়ে তার থেকে দুর্বল কাউকে হেনস্থা করছে। স্কুল বা কলেজ, যেখানেই হোক না কেন নির্যাতন, দলবদ্ধতার একটা বড় ভূমিকা আছে। কে কোন দলে পড়ছে সেটাও কিন্তু এখানে বিবেচ্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা একটা মর্মান্তিক মোড়ে পৌঁছেছে বলে এত কথা হচ্ছে। অথচ আমরা জানতেই পারছি না কত পড়ুয়া নির্যাতিত হয়ে তার অধীত বিষয়ের শাখা পরিবর্তন করছে, প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকছে, কেরিয়ারে এগোতে পারছে না-সে সব খবর আমাদের কাছে এসেও পৌঁছচ্ছে না।

advertisement

আর নির্যাতন তো শুধু কলেজেই হচ্ছে না…

সে তো একশোবার। কর্মক্ষেত্রে, বিয়ের পর বিবাহিতাদের জীবনে-কোথায় নির্যাতন নেই! দলবদ্ধভাবে দুর্বলের উপর সবলের আস্ফালন সর্বত্র আছে। সব জায়গায় নির্যাতনের জন্য সফ্ট টার্গেট খুঁজে নেওয়া হয়। যে নবাগত, নতুন পরিবেশের নিয়মকানুন জানে না, তাকে এই তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

advertisement

আচ্ছা, এরকম কি হতে পারে নতুন যখন পুরনো হয়ে যাচ্ছে, তখন সেও সুযোগ খুঁজছে নবাগতদের উপর র‍্যাগিং করার? নিজের উপর যা হয়েছিল, সেটা উশুল করে নিতে চাইছে? সেই সমীকরণ কি কাজ করছে?

কাজ করতে পারে। আবার নাও করতে পারে। অন্য ক্ষেত্রে আমি এরকম কেস স্টাডি পেয়েছি। দেখেছি, যারা শৈশবে যৌন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে, তারাই পরে যৌন নির্যাতনকারী হয়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং-এর ক্ষেত্রে আমি দু’ রকমের ট্রেন্ড দেখেছি। একদল থাকে যারা নবাগতদের আগলে রাখে। নিজেদের উপর হওয়া তিক্ততার পুনরাবৃত্তি হতে দেয় না। আবার আর এক দল কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কবে তারা ক্ষমতাধর হয়ে নতুনদের উপর নির্যাতন করবে।

মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার

আমাদের সন্তানরাই তো হয় র‍্যাগিং করছে বা এর শিকার হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আমাদের কর্তব্য কী?

র‍্যাগিং-এর কারণ যারা হচ্ছে বা র‍্যাগিং যারা করছে সেক্ষেত্রে বলতে পারি ছোট থেকে শেখাতে হবে অন্যদের মর্যাদা দিতে৷ বোঝাতে হবে, আমার থেকে যে আলাদা, তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, মশকরা করব না৷ ভিন্নতাকে সম্মান করতে হবে৷ একজন আমার থেকে আলাদা হতেই পারেন৷ মানসিক অসুস্থতা, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন-যে কারণেই আলাদা হোন না কেন, তাঁর অমর্যাদা করা চলবে না৷ আমার থেকে একজন অন্যরকম বলেই তিনি আমার ঠাট্টা, তামাশার পাত্র নন-এই ভাবনাটা ছোট থেকে সন্তানের মজ্জাগত করুন৷ নিজের আচরণেও এই বিষয়টি আনুন৷ দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারকে কোনওমতেই মান্যতা দেবেন না৷

আর এই আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে সন্তানকে কীভাবে প্রতিরোধ করতে শেখাব?

আমাকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে-এটাও শেখান সন্তানকে৷ পোশাকি ভাষায় যাকে আমরা বলি অ্যাডাপ্টেবেলিটি৷ জীবনে টিকতে গেলে বাস্তবের সঙ্গে এই মানিয়ে চলাও কিন্তু শিখতে হবে৷ কোথায় আমি গণ্ডি টানব, কোথায় ‘না’ বলব-সেটা কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে৷ যেটা পারছি না, সেখান থেকে সাময়িকভাবে সরে আসব৷ দক্ষতা অর্জন করে আবার ফিরে যাব৷ তার জন্য সন্তানকে স্বাবলম্বী করে তুলুন৷ দায়িত্ব পালন করতে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করুন৷ শুধু নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া নয়৷ তাকেও নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে দিন৷ ছোট ছোট বিষয় থেকেই শুরু করুন৷ আপাতভাবে মনে হতে পারে এই কথাগুলির কোনও সম্পর্ক নেই এই সমস্যায়৷ তা কিন্তু নয়৷ এভাবে তিলে তিলে বিষয়গুলি শুরু হয়৷ কারণ মনে রাখতে হবে হেনস্থা যে কোনও জায়গায় যখন তখন আসতে পারে৷ তাই নিজের সমস্যা নিজেই লড়াই করবার অভ্যাস তৈরি করতে হবে৷

একটা কথা মনে হচ্ছে৷ র‍্যাগিং-এরও তো বিভিন্ন মাত্রা আছে৷ এই যে পোশাক খুলে নেওয়া হচ্ছে, এর পিছনে কি কোনও অবদমন কাজ করে? নাকি তাদের বড় করে তোলার মধ্যে কিছু গলদ থেকে যাচ্ছে?

সব সময় যে অভিভাবকদের দিকে শিক্ষণে কোনও ভুল থাকছে, তা কিন্তু নয়৷ অনেকাংশে তার নিজস্ব প্রবণতাও দায়ী৷ হতে পারে অতীতে সে নিজেও কোনও হেনস্থার শিকার৷ ঘৃণ্যতম ও চরমতম পন্থায় নির্যাতন করছে৷ জিনগত গঠন এবং পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপরেও নির্ভর করছে অনেক কিছু৷ অন্যদের পোশাক খুলিয়ে নির্যাতন করার মধ্যে কিন্তু নিজের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ, উল্লাস, স্বস্তি সবই থাকছে৷ অর্থাৎ আমার অঙ্গুলিহেলনে তুমি সব করতে বাধ্য৷

সন্তানের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতা কমাতে অভিভাবক কী পদক্ষেপ করবেন?

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সন্তানকে তৈরি করতে হবে৷ তার জন্যই তাকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে৷ সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো খুব দরকার৷ সমষ্টিগতভাবে সমস্যা মোকাবিলার জন্য তৈরি করতে হবে৷ সন্তানের পাশে অবশ্যই থাকুন৷ কিন্তু সব সময় তার অবলম্বন হয়ে উঠবেন না৷ নেগেটিভ পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে শেখান সন্তানকে৷ স্কুলে কোনও ঝামেলা হলে পেরেন্টস গ্রুপে ঝগড়া না করে বাচ্চাকে বলুন নিজেই এর সমাধান বার করতে৷ তবে দেখবেন সন্তানের সঙ্গে আপনার কমিউনিকেশন যেন বন্ধ না হয়ে যায়৷ কমিউনিকেশন রাখুন৷ সলিউশন কী হবে, সেটা প্রাথমিকভাবে সন্তানকেই বলুন খোঁজার চেষ্টা করতে৷ আর একটা কথা অবশ্যই সন্তানকে জানাবেন যে সঙ্কট যত বড়ই হোক না কেন, তার পাশে আপনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সব সময় আছেন৷

বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Psychologist on Ragging: আমাদের সন্তানরাই হয় র‍্যাগিং করছে বা এর শিকার হচ্ছে, কী করবেন অভিভাবকরা, জানালেন মনোবিদ
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল