কিন্তু হেপাটাইটিস আসলে কী?
হেপাটাইটিস হল হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই সহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। ব্যক্তির শরীরে এই ধরনের ভাইরাসের বৃদ্ধি ঘটলে তিনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসকদের মতে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিসের মতো অসংখ্য লিভারের রোগ হতে পারে। ঠিক এমনই একটি উদাহারণ হল সিস্টিক ফাইব্রোসিস। এটি সাধারণত জিনগতভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগের উদাহরণ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হল, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা, অ্যালকোহল সেবন এড়ানো এবং ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সঠিক ডায়েট মেনে চলা।
advertisement
আরও পড়ুন: প্রস্রাবে বা প্রস্রাবের সময়ে কিছু লক্ষণ অবহেলার নয়, প্রস্টেট ক্যান্সারের আগাম লক্ষণ হতে পারে
ভাইরাল হেপাটাইটিস কী?
বিজয়ওয়াড়ার মণিপাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. কে চন্দ্র কান্তের (Dr. K Chandra Kant) সঙ্গে কথোপকথনে জানা গিয়েছে যে, ‘ভাইরাল হেপাটাইটিস বলতে বোঝায় যকৃতের সংক্রামক এবং অ-সংক্রামককারী ভাইরাস যা লিভারের নানান ভাবে ক্ষতিসাধন করে। সংক্রামক কারণগুলির মধ্যে হেপাটাইটিস ভাইরাস (এ, বি, সি, ডি, এবং ই), এইচএসভি (HSV) এবং সিএমভি (CMV) অন্তর্ভুক্ত। অন্য দিকে, অ-সংক্রামক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল সেবন, ড্রাগসযুক্ত বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ, হোমিওপ্যাথি, যক্ষ্মানির্মূলক ওষুধ, উইলসন ডিজিজ এবং অটোইমিউন হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস এ এবং ই থেকে সাধারণত শরীর খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে। অন্য দিকে, হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও হেপাটাইটিস থেকে বেশিরভাগ রোগীই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার কারণে লিভারের ক্ষতি এবং লিভার ক্যানসার বা অন্যান্য ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব’।
তিনি আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, ‘জীবনধারা অনুশীলনের ক্ষেত্রে - অ্যালকোহল এড়ানো, স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করা এবং ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে মেডিসিন ও ডায়েট মেডিসিন নেওয়া (এমনকী দরকার পড়লে কাউন্টার ড্রাগস) এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতি প্রতিরোধে সক্ষম’।
আরও পড়ুন: ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় জেরবার? ব্যথা মেটাতে কাজে আসবে ঘরোয়া টোটকাই
ডা. চন্দ্র কান্ত জানিয়েছেন, ‘গর্ভবতী মহিলা, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত স্ক্রিনিং, হেপাটাইটিস এ এবং বি-এর জন্য সময়মতো টিকা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের টিকা দান, যৌন ক্রিয়াকলাপের সময় কন্ডোম ব্যবহার ইত্যাদি লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। সময়মত স্ক্রিনিং লিভার ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়কে সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। পরিবারের সদস্যদের স্ক্রিনিং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সাহায্য করে’।
হায়দরাবাদের কামিনেনি হাসপাতালের সিনিয়র হেপাটো বিলিয়ারি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন এবং ডিরেক্টর হেপাটোবিলিয়ারি এবং ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি ডা. রাজশেখর পেরুমল্লারের (Dr. Rajasekhar Perumalla) মতে, ‘লিভারের কার্যকারিতা এবং সুস্থতা মূল্যায়নের জন্য সঠিক স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগগুলি নির্ণয় করা বাঞ্ছনীয়৷ হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে। প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং সময় মতো সঠিক ওষুধ দ্বারা তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। হেপাটাইটিস এ এবং বি ভ্যাকসিনের সাহায্যেও প্রতিরোধযোগ্য’।
ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণে লিভারের ক্ষতি রোধ করার জন্য তিনি জীবনযাত্রার নিত্যব্যবস্থা এবং সতর্কতা সম্পর্কে কিছু টিপস দিয়েছেন:
১. পরিষ্কার পানীয় জলের ব্যবহার- UV, RO এবং যান্ত্রিক ভাবে পরিস্রুত পানীয় জল ব্যবহার করা। যেসব অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স বোরওয়েলের ওপর নির্ভর করে সেখানে অতিরিক্ত ভাবে ক্যান্ডেল-টাইপ ফিল্টার ইনস্টল করা উচিত। বাইরে ভ্রমণের সময় প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করা উচিত।
২. রাস্তার পাশের খাবারের দোকান থেকে দূরে থাকাই ভালো, বিশেষ করে যারা মিল্কশেক এবং জুস বিক্রি করে।
৩. নাপিতের দোকান এবং বিউটি পার্লারে যদি রেজার ব্লেড নতুন না হয় বা সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করা হয় তাহলে তা ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে। মুখের ত্বক থেকে ব্ল্যাক হেডস এবং হোয়াইট হেডস অপসারণ করতে ব্যবহৃত ব্লেড এবং মেটাল স্ক্র্যাপার বিভিন্ন জনের ব্যবহারে সংক্রমণের কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে৷
৪. হেপাটাইটিস বি এবং এইচসিভি এইচআইভির চেয়ে দ্রুত এবং যৌন কারণে ছড়ায়। অতএব, নিরাপদ যৌন সম্পর্ক করা উচিত।
৫. ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ ব্যবহার (IVDU) না করা।
৬. হেপাটাইটিস এ এবং বি টিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। হেপাটাইটিস বি-দ্বারা সৃষ্ট লিভার ক্যানসারই একমাত্র ক্যানসার যা টিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
৭. এইচবিভি এবং এইচসিভি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবেই রোগ সনাক্তকরণ করা যেতে পারে। লিভার ক্যানসার এবং সিরোসিস সৃষ্টিকারী এই ভাইরাস দুটিই কার্যকরভাবে চিকিৎসাযোগ্য।