সাধারণত যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে যৌনবাহিত সংক্রমণ বা রোগ। আসলে এই রোগের কারণ হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস অথবা প্যারাসাইট বা পরজীবী। এগুলোই রক্ত, বীর্য অথবা ভ্যাজাইনাল ও বডি ফ্লুইডের মাধ্যমেই এক জনের দেহ থেকে অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই বিষয়টা নিয়ে তেমন ওয়াকিবহাল থাকে না অধিকাংশ মানুষ। এমনকী কেন কীভাবে সমস্যা হচ্ছে, সেটাও বুঝে উঠতে পড়েন না অনেকেই। ফলে রোগ ধরা পড়তে অনেকটা সময় লেগে যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: তৈলাক্ত ত্বক? এই শীতে কি তাহলে ময়েশ্চারাইজারটা বাদই দেবেন? কোনটা করা উচিত
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ-এর উপসর্গ কি আদৌ থাকে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, প্রতিদিন সারা বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যার বেশির ভাগই অ্যাসিম্পটোমেটিক বা উপসর্গহীন। আসলে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণের ক্ষেত্রেই যে উপসর্গ থাকবেই, এমনটা নয়। তবে তার মানে এই নয় যে, এটা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না। বরং সংক্রমণ ধরা না-পড়ার কারণে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায়। দেখে নেওয়া যাক, চার ধরনের যৌনবাহিত সংক্রমণের বিষয়ে। যার কোনও উপসর্গ থাকে না। উপরন্তু এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সিফিলিস:
বেশির ভাগ সময়ই যাঁরা সিফিলিসে আক্রান্ত হন, তাঁরা বুঝতেও পারেন না। সিফিলিস হল এমন একটা অবস্থা, যা বুঝতেও পারেন না রোগী কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তি। আসলে এর কোনও উপসর্গও থাকে না। আর এর উপসর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এমনকী উপসর্গও সে-ভাবে চোখে পড়ে না। আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে জানানো হয়েছে যে, চিকিৎসা ছাড়া সিফিলিস রোগীর দেহে থেকে যায়। আর শরীরের ক্ষতি করতে থাকে। পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করে এবং তখন থেকেই উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। তাই বলা হয় যে, এই রোগ যাতে ধরা পড়ে, তার জন্য নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত যৌন সঙ্গম এবং অসুরক্ষিত সঙ্গমে লিপ্ত হন, তাঁদের সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।
ক্লামিডিয়া:
ক্লামিডিয়া এমন এক যৌন সংক্রমণ, যা ঘটে একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেনের কারণে। আর ব্যাকটেরিয়ার ওই নতুন স্ট্রেনটি ক্লামিডিয়া ট্রাকোমিটিস নামে পরিচিত। যৌন সংসর্গে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ অথবা বীর্যের থেকে এই রোগ এক জনের দেহ থেকে অন্যের দেহে বাহিত হয়। এর পর জেনিটাল কন্ট্যাক্ট অথবা ওরাল, ভ্যাজাইনাল এবং অ্যানাল সেক্সের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সংক্রমণ হওয়ার ২ থেকে ১৪ দিন পরে সাধারণত এর উপসর্গ প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বহু মানুষ বিশেষ করে পুরুষরা বছরের পর বছর ধরে ক্লামিডিয়াতে আক্রান্ত থাকেন। অথচ সেই রোগের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অথবা উপসর্গ দেখা দিয়ে তা আবার কয়েক দিনের মধ্যেই সুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ফলে রোগ নির্ণয় করা খুবই মুশকিল হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে চাইছেন? সকালে রস করে খান এই ফল, তফাত দেখবেন হাতে-নাতে, কী এর উপকারিতা
গনেরিয়া:
গনেরিয়া হল অন্যতম ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গনেরিয়া হল দ্বিতীয় সাধারণ যৌন বাহিত সংক্রমণ। এতে মহিলা এবং পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ সাধারণত অ্যাসিম্পটোমেটিক বা উপসর্গহীন হয়। যদিও বা উপসর্গ প্রকাশ পায়, তা-হলে সংক্রমণের ২-৭ দিন পরে তা প্রকাশ পেতে থাকে। রিপোর্টে দাবি, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুরুষ এবং প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলা এতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়াম:
মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়াম বা এমজি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ। যা পরে যৌনবাহিত রোগের আকার ধারণ করতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই ধরনের যৌন বাহিত সংক্রমণে উপসর্গ তেমন ভাবে প্রকাশ পায় না। তবে কী কারণে এটা অ্যাসিম্পটোমেটিক, তা জানা যায় না। রিপোর্টে দাবি, সংক্রমণের ১ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে এই সংক্রমণ দেখা যায়। এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের শরীরে বহু বছর ধরে বাসা বেঁধে রয়েছে এই সংক্রমণ। অথচ সঠিক ভাবে রোগও ধরা পড়ে না।
যৌন বাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে তাই নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। আর রোগ ধরা পড়া মানেই সব কিছু শেষ, এমনটা একেবারেই নয়। সঠিক চিকিৎসা করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, এমনকী সেরেও যায়।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)