এই গাজন উৎসব মূলত এক ধরণের মানতের পুজো। জনবিশ্বাস অনুযায়ী, প্রাচীনকাল থেকে যখন গ্রামবাসীরা কোনও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতেন বা দুর্দিনে পড়তেন, তখন তাঁরা মহাদেব ও শীতলার কাছে মানত করতেন। সেই মানত পূর্ণ হলে, তাঁদের উদ্দেশে বিশেষ পুজো ও উৎসবের আয়োজন করতেন। সেই ঐতিহ্যই রূপ নিয়েছে আজকের এই ধর্মগাজন মহোৎসবে, যা প্রায় ৩০০ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। তবে এই গাজন চৈত্রের সংক্রান্তিতে নয়, আয়োজিত হয় বৈশাখের সংক্রান্তিতে।উৎসবের প্রথম দিন ভোরবেলা থেকেই গ্রামে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। সন্ন্যাসীরা সারিবদ্ধভাবে মন্দির চত্বর সংলগ্ন পুকুরে গিয়ে জলস্নান করেন। এর পর তাঁরা মন্ত্রপাঠ ও শিবের নামগান করতে করতে মন্দির প্রাঙ্গণে এসে অংশগ্রহণ করেন ‘ত্রিশূল ঝাঁপ’-এর মতো সাহসী আচার-অনুষ্ঠানে। এই দৃশ্য দেখতে আশপাশের বহু গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও রয়েছে। সন্ধ্যায় হয় শিবের পুজো, আরতি ও আতসবাজির প্রদর্শনী। মন্দির চত্বরজুড়ে বসে নানা ধরনের স্টল—স্থানীয় হস্তশিল্প, খাদ্যপণ্য ও খেলনা নিয়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই অংশ নেন এই লোকোৎসবে।
advertisement
আরও পড়ুন : ১ টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই এঁদের চরম সর্বনাশ! জানুন কোন ৪ জন ভুলেও মুখে তুলবে না এই সবজি
এই উৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি গ্রামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক। গ্রামের মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই উৎসবের প্রস্তুতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মন্দির কমিটির নেতৃত্বে সবাই মিলে সামগ্রিকভাবে অনুষ্ঠান সফল করে তোলেন। হরিণহুলার ধর্মগাজন মহোৎসব কেবল এক উৎসব নয়, বরং তা একটি চলমান লোকঐতিহ্য। ৩০০ বছরের পুরনো এই রীতিনীতির মধ্যে রয়েছে মানুষের বিশ্বাস, আস্থা, ধর্মভক্তি ও মিলনের স্পর্শ। এক সপ্তাহ জুড়ে চলা এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, তা গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিরও এক উজ্জ্বল নিদর্শন।