লাললিয়ানপুই বহু দিন ধরে ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং ২০১২ সালে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করান। পরে গ্রাফট রিজেকশন হওয়ায় ২০২০ সালে তাঁকে দ্বিতীয়বার প্রতিস্থাপন করতে হয়। আজীবন ইমিউনোস্যাপ্রেসিভ ওষুধ খেতে হলেও, শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জকে জয় করে তিনি দু’বারই স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে সক্ষম হন — যা অত্যন্ত বিরল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অনন্য।
advertisement
আরও পড়ুনঃ চা বিক্রির টাকায় তিন বছরে ৬৯ হাজার কয়েন! মেয়ের জন্য স্কুটি কিনে চমকে দিলেন চন্দ্রকোনার বাবা
২০২৩ সালে তাঁর প্রথম গর্ভাবস্থায় তিনি এক সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর দুই বছর পর, ২০২৫ সালে, তিনি আবারও স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করেন এবং ৩৬ সপ্তাহ ৬ দিনে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে এক সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যার ওজন ছিল ৩.২ কেজি। দুইবারের গর্ভাবস্থাই সফলভাবে সম্পন্ন হয়, কোনও বড় জটিলতা ছাড়াই, এবং তাঁর কিডনির কার্যকারিতা পুরো সময় স্থিতিশীল ছিল।
ডা. রোহিত রুংটা বলেন, “কিডনি প্রতিস্থাপন হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে গর্ভধারণ খুবই বিরল ও জটিল। কারণ এই রোগীদের সারাজীবন ইমিউনোস্যাপ্রেসিভ ওষুধ নিতে হয়। লাললিয়ানপুইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষত্ব হল, তিনি একবার নয়, দু’বার স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করেছেন, তাও দুটি প্রতিস্থাপনের পর। উভয় গর্ভাবস্থাতেই আমরা তাঁর কিডনি ফাংশন ও শিশুর বৃদ্ধিকে সমানভাবে নজরে রেখেছিলাম। এটি চিকিৎসা দলের পরিশ্রম, রোগীর সাহস এবং আশার এক অসাধারণ গল্প।”
ডঃ শিল্পীতা ব্যানার্জি বলেন, “একজন রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর পরপর দুইবার গর্ভধারণ অত্যন্ত বিরল। এই ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপ খুব সতর্কভাবে নিতে হয়—ওষুধের মাত্রা, কিডনির সুরক্ষা, শিশুর বৃদ্ধি—সব কিছু নিয়মিত পর্যবেক্ষণে ছিল। রোগীর সাহস, বিশ্বাস এবং আমাদের টিমের সমন্বয়েই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।”
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লাললিয়ানপুই বলেন, “দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগে এবং দুইবার ট্রান্সপ্লান্ট করানোর পর আমি কখনও ভাবিনি মা হতে পারব। কিন্তু ডা. রোহিত রুংটা ও ডঃ শিল্পীতা ব্যানার্জি অবিরাম যত্ন ও উৎসাহের জন্য আমি আজ দুই সন্তানের মা। তাঁরা আমাকে শুধু চিকিৎসা দেননি, নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহসও দিয়েছেন।”
লাললিয়ানপুইয়ের এই যাত্রা আজ অসংখ্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত নারীর কাছে এক অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে যে চিকিৎসা দক্ষতা, অধ্যবসায় এবং বিশ্বাস থাকলে, অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে—একবার নয়, দু’বার।
